টপ নিউজ ডেক্স: আয়োডিন খুবই অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হলেও এর গুরুত্ব কিন্তু অপরিসীম। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের আয়োডিন প্রয়োজন প্রতিদিন ১৫০ মাইক্রোগ্রাম। মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ও থায়রয়েড হরমোন তৈরির জন্য প্রয়োজন আয়োডিন। এই হরমোনটি রক্তের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অংশের চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি গলার সামনের দিকে প্রজাপতির মতো গ্ল্যান্ডের অবস্থান। শরীরের তাপ ও শক্তির জন্যও প্রয়োজন আয়োডিন। এর অভাব হলে তা শরীরে প্রকটরূপে দেখা যায়। গর্ভবতী মহিলাদের আয়োডিনের অভাব হলে তাতে কয়েকটি সমস্যা দেখা যায়। যেমন-গর্ভপাত, মৃত শিশুর জন্ম,মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম, বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম, । অর্থাৎ অনেক সময় শিশু বোবা কানা ও ট্যারাও হয়। খাদ্যে আয়োডিনের ঘাটতি হলে তখন কয়েকটি অসুস্থতা দেখা যায়। যেমন প্রথমত গলগন্ড বা গলাফোলা রোগ, ক্রেটিনিজম (হাবাগোবা ও বামনত্ব),হাইপোথায়রয়েডিজম (থায়রয়েডগ্রন্থির কর্মক্ষমতা হ্রাস), প্রজনন সমস্যা ও শিশু মৃত্যু।
বিষয়টির বিস্তারিত জানিয়েছেন বারডেম হাসপাতালের চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.) আখতারুন নাহার আলো।
গলগন্ড বা গলাফোলা রোগ : আয়োডিনের অভাবে এই রোগটি দেখা যায়। এই রোগে তেমন কিছু কষ্ট না হলেও রোগী সব সময় অস্বস্তিতে ভুগে। এতে থায়রয়েড গ্ল্যান্ড অস্বাভাবিক আকারে বড় হয়। যেহেতু দেহে থায়রয়েড হরমোন তৈরি হয় না। সেহেতু এই গ্ল্যান্ডকে এই অভাব পূরণের জন্য অতিরিক্ত কাজ করতে হয় বলেই গ্ল্যান্ডটি বড় হয়ে যায়।
হাইপোথায়রয়েডিজম : এতে থায়রয়েড হরমোন ঠিকমতো কাজ করে না বলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। যেমন ক্লান্তি, আলসেমি,নিদ্রাহীনতা,, অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, ভুলে যাওয়া, ওজন বৃদ্ধি, শুষ্ক ও অমসৃণ ত্বক, খরখরে কণ্ঠ, শীতে অসহনশীলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় শিশুরা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে থাকে। হাইপোথায়রয়েডিজমের রোগির জন্য খাবারে মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাদ দেওয়া ভালো। থায়ামিন বা ভিটামিন বি১, যুক্ত খাবার তাদের জন্য বেশ উপকারী।
ক্রেটিনিজম হাবাগোবা অথবা বামনত্ব : গর্ভাবস্থায় মা যদি আয়োডিনের অভাবে ভুগেন, তাহলে তিনি ক্রেটিনিজম শিশুর জন্ম দিতে পারেন। এ ধরনের শিশুরা হয়তো বোকা, কানা, বোধবুদ্ধিহীন, শারীরিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। এদের ঠোঁট হয় মোটা ও নিচের দিকে ঝুলে থাকে। ভ্রূণের বৃদ্ধির বিশেষ পর্যায়ে গর্ভস্থ ভ্রূণ উপযুক্ত আয়োডিন না পেলে শিশুটির মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
রান্নার ফলে আয়োডিন কখনও নষ্ট হয় না। আয়োডিন মূলত পাওয়া যায় উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে। মাছের মধ্যে সমুদ্রের মাছে প্রচুর আয়োডিন বিদ্যমান। এছাড়াও সমুদ্রের উপকূলবর্তী স্থানের বেড়ে ওঠা শাকসবজিতে ও গবাদি পশুর মাংসে আয়োডিন থাকে। এদিকে পেঁয়াজ ও পালংশাকের মধ্যেও আয়োডিন পাওয়া যায়। এর মদ্ধে সপ্তাহে দু-একদিন সমুদ্রের মাছ খেতে পারলে ভালো হয়। যদিও শরিরে আয়োডিন খুবই কম পরিমাণে প্রয়োজন।
সম্পাদনা: নাসরিন ইসলাম