‘প্রতিলতা ওয়াদ্দেদার’ এই নামটি বাঙালি চেতনায় এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। শনিবার ২৪ সেপ্টেম্বর, বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৯০তম আত্মাহুতি দিবসে তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছে দেশবাসী। এই দিনে ১৯৩২ সালে চট্টগ্রামের ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণকালে শহীদ হন মাস্টারদা সূর্যসেনের এই বীর সহযোদ্ধা। এই বীরকন্যার নাম আমরা কমবেশি সবাই জানে কিন্তু আপনি কি জানেন, কে ছিলেন এই প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার?
১৯১১ সালের ৫ই মে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানী জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার ছিলেন তাঁর পিতা এবং মাতা প্রতিভাদেবী। তাঁদের ছয় সন্তান (মধুসূদন, প্রীতিলতা, কনকলতা, শান্তিলতা, আশালতা ও সন্তোষ)-এর মধ্যে প্রীতিলতা ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান ও জ্যেষ্ঠ কন্যা। দাশগুপ্ত ছিল তাঁদের পরিবারের আদি পদবী। তবে তাঁদের কোন এক পূর্বপুরুষ “ওয়াহেদেদার” উপাধি পেয়েছিলেন নবাবী আমলে, এই ওয়াহেদেদার থেকে ওয়াদ্দেদার বা ওয়াদ্দার।
প্রীতিলতার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডাঃ খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ছিল। এই স্কুল থেকে ১৯১৮ সালে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। ভালো ফলাফলের জন্য সব শিক্ষকের খুব প্রিয় ছিলেন তিনি। সেই শিক্ষকদেরই একজন ছিলেন ইতিহাসের ঊষাদি, যিনি ইংরেজ সৈন্যদের সাথে পুরুষের বেশে ঝাঁসীর রানী লক্ষীবাই এর লড়াইয়ের ইতিহাস বলতেন প্রীতিলতাকে। এছাড়াও তাঁর স্কুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন কল্পনা দত্ত, পরবর্তীকালের আরেক বিপ্লবী।
এরপর যখন শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা রাখছিলেন প্রীতিলতা, তখন মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন শেষে চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা সক্রিয় হয়ে উঠছিলেন। এরই মধ্যে ১৯২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর, সূর্য সেনের বিপ্লবী সংগঠনের সদস্যরা প্রকাশ্য দিবালোকে টাইগার পাস এর মোড়ে সরকারী কর্মচারীদের বেতন বাবদ নিয়ে যাওয়া ১৭,০০০ টাকা ছিনতাই করে। এরপর এই ছিনতাইয়ের প্রায় দুই সপ্তাহ পর বিপ্লবীদের গোপন বৈঠক চলাকালীন অবস্থায় তাঁদের আস্তানায় হানা দেয় পুলিশ এবং লড়াইয়ের এক পর্যায়ে গ্রেফতার হন সূর্য সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী। তাঁদের বিরুদ্ধে রেলওয়ে ডাকাতি মামলা দায়ের করা হয়। কিশোরী প্রীতিলতার মনে এই ঘটনা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। এ বিষয়ে ঊষাদির সাথে কথা বলে তিনি এই মামলার ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে অনেক কিছুই জানতে পারেন, সেইসাথে বিপ্লব, তাঁদের উদ্দেশ্য ও লড়াই এবং ঊষাদির দেওয়া “ঝাঁসীর রাণী” বইটি পড়ে রাণী লক্ষীবাইয়ের জীবনী তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করে।
এর কিছুদিন পরেই ১৯২৪ সালে, বেঙ্গল অর্ডিনান্স নামক এক জরুরি আইনে বিনাবিচারে আটক করা শুরু হয় বিপ্লবীদের। এই আইনে আটক হয়েছিলো চট্টগ্রামের বিপ্লবীদলের অনেক নেতা ও সদস্যও। বিপ্লবী সংগঠনের ছাত্র আর যুবকদের মধ্যে যারা বাইরে ছিল তাঁরা তাদের অস্ত্রশস্ত্র, সাইকেল ও বইপত্র লুকিয়ে রাখতো। এমনি এক বিপ্লবী দলের কর্মী পূর্ণেন্দু দস্তিদার ছিলেন প্রীতিলতার নিকট-আত্মীয়। তিনি কিছু গোপন বই রাখেন প্রীতিলতার কাছে। প্রীতিলতা তখন দশম শ্রেনীর ছাত্রী। সেসব বই তাঁর কাছে যক্ষের ধন, লুকিয়ে লুকিয়ে তিনি পড়েন “দেশের কথা”, “ক্ষুদিরাম”, “বাঘা যতীন” আর “কানাইলাল”। এই সমস্ত বই প্রীতিলতাকে বিপ্লবের আদর্শে আরো অনুপ্রাণিত করে। এরপর একদিন দাদা পূর্ণেন্দু দস্তিদারের কাছে বিপ্লবী সংগঠনে যোগদান করার গভীর ইচ্ছার কথা জানান প্রীতিলতা। কিন্তু তখনও পর্যন্ত মহিলা সদস্য বিপ্লবীদলে গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু দৃঢ় প্রত্যয়ী প্রীতিলতাকে নাকচ করে দেবার শক্তি ছিলো না দাদা পূর্ণেন্দু দস্তিদারের। এরপর ধীরে ধীরে দীক্ষিত হন প্রীতিলতা এবং বিপ্লবী বহু ঘটনাক্রম পাড়ি দিয়ে তার জীবনে আসে ১৯৩২ সাল।
সেসময় চট্টগ্রাম শহরের উত্তরদিকে পাহাড়তলী স্টেশনের কাছে ইউরোপিয়ান ক্লাব ছিল ব্রিটিশদের পছন্দীয় প্রমোদকেন্দ্র। পাহাড় ঘেরা এই ক্লাবের চতুর্দিকে ছিল প্রহরীদের অবস্থান। শ্বেতাঙ্গ এবং ক্লাবের কর্মচারী ছাড়া এদেশীয় কেউ ঐ ক্লাবে ঢুকতে পারতো না। ক্লাবের সামনের সাইনবোর্ডে বড় বড় অক্ষরে লিখা ছিল “ডগ এন্ড ইন্ডিয়ান প্রহিবিটেড”। এই ক্লাবে সন্ধ্যা হতেই ইংরেজরা এসে মদ খেয়ে নাচ, গান এবং আনন্দ উল্লাস করতো। সেখানে বারংবার হামলা করার চেষ্টা করেও বিপ্লবীরা ব্যর্থ হয়েছিল। এরপর মাষ্টারদা সূর্যসেন ১৯৩২ এর সেপ্টেম্বর মাসে পুনরায় ক্লাবটিতে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং এই আক্রমণে নেতৃত্বের ভার পড়ে নারী বিপ্লবী প্রীতিলতার উপর।
২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩২, আক্রমণের দিন, প্রীতিলতার পরনে ছিল মালকোঁচা দেওয়া ধুতি আর পাঞ্জাবী, মাথায় সাদা পাগড়ি আর পায়ে রবার সোলের জুতা। সেদিন আক্রমণে আরো অংশ নেন কালীকিংকর দে, প্রফুল্ল দাস, বীরেশ্বর রায়, শান্তি চক্রবর্তী- এদের পরনে ছিল ধুতি আর শার্ট। অন্যদিকে, মহেন্দ্র চৌধুরী, সুশীল দে আর পান্না সেনের পরনে ছিল লুঙ্গি আর শার্ট। বিপ্লবীদের আশ্রয়দাতা যোগেশ মজুমদার আক্রমণের সংকেত দেখানোর পরেই তাঁরা ক্লাবে আক্রমণ শুরু করে।
সেসময় ক্লাবঘরে প্রায় চল্লিশজন মানুষ অবস্থান করছিল। বিপ্লবীরা আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে বিপ্লবীরা ক্লাব আক্রমণ শুরু করে। প্রীতিলতা, শান্তি চক্রবর্তী আর কালীকিংকর দে ছিলেন পূর্বদিকের গেটে,তাঁদের কাছে ছিলো ওয়েবলি রিভলবার এবং বোমা। ক্লাবের দক্ষিণের দরজায় সুশীল দে, বীরেশ্বর রায় আর মহেন্দ্র চৌধুরী ছিলেন ওয়েবলি রিভলবার এবং ৯ ঘড়া পিস্তল নিয়ে। আর রাইফেল আর হাতবোমা নিয়ে ক্লাবের উত্তরের জানালা দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছিলেন পান্না সেন আর প্রফুল্ল দাস। প্রীতিলতা হুইসেল বাজিয়ে আক্রমণ শুরুর নির্দেশ দেওয়ার পর পুরো ক্লাব কেঁপে উঠে ঘন ঘন গুলি আর বোমার আঘাতে। ক্লাবঘরের সব বাতি নিভে যাওয়ার কারনে অন্ধকারে ছুটোছুটি করতে শুরু করে সবাই। ক্লাবে ভিতরে কয়েকজন ইংরেজ অফিসারের কাছে ছিল রিভলবার, তারাও পাল্টা আক্রমণ করা শুরু করে। একজন অফিসারের গুলির আঘাত লাগে প্রীতিলতার বাঁ-পাশে।
এরপর প্রীতিলতার নির্দেশে শেষ হয় আক্রমণ, বিপ্লবী দলের সাথে কিছুদূর এগিয়ে আসেন তিনি। কিন্তু শেষে আহত প্রীতিলতা পড়ে যান মাটিতে। কালীকিংকর দের কাছে নিজের রিভলবারটি দিয়ে তাদের নির্ধারিত জায়গায় যাবার নির্দেশ দেন তিনি। তাঁরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর দেখতে পান ব্রিটিশ পুলিশ তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে এবং তিনি ধরা পড়ে যাবেন। সেসময় তিনি তাঁর সঙ্গে থাকা পটাশিয়াম সায়ানাইড নিজের মুখে ঢেলে দেন। এভাবেই দেশমাতৃকার জন্য ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর আত্নহুতি দিয়েছিলেন চট্টলার রাণী, বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার।
সেই পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাবটি বর্তমানে ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা জাদুঘর’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। যদিও সেটি এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পর্যায়ের এক প্রকৌশলীর দপ্তর হিসেবে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর সেমিপাকা ঘরটি পাকিস্তান সরকার রেলওয়ের কাছে হস্তান্তর করে, যা এখনও রেরওয়ে ব্যবহার করছে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরেচট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে যেখানে প্রীতিলতা আত্মহুতি দিয়েছিলেন, সেখানে ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা ভাস্কর্য’ উন্মোচন করা হয়। প্রীতিলতার এই আবক্ষমূর্তি কলকাতার ভাস্কর গৌতম পাল তাম্র দিয়ে তৈরি করেন। এছাড়াও ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রীতিলতার জন্মস্থান পটিয়ার ধলঘাট গ্রামে সাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে প্রীতিলতা সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স। সুদৃশ্য কমপ্লেক্সের সামনেও রয়েছে বীরকন্যা প্রীতিলতার আবক্ষ ভাস্কর্য।
বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, দেশের জন্য, সহযোদ্ধাদের জন্য, স্বাধীনতার নিজের আত্মহুতি দিতে কার্পণ্য করেন নি। তাঁর এই আত্মত্যাগ আমাদের স্বার্থহীনভাবে দেশ রক্ষায় নিয়োজিত হতে, দেশকে ভালোবাসতে শিখায়। আমরা তাঁর এই আত্মত্যাগ, আত্যহুতি, আত্ম বিসর্জন কখনোই ভুলবো না।
হাবিবা সুলতানা
[…] কে ছিলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার? […]
avanafil prezzo
cialis 20 mg prezzo
cialis 10 mg
cialis effetti benefici
avanafil dove comprarlo
spedra online
tadalafil 5 mg miglior prezzo
spedra 100mg
cialis da 5 mg prezzo
cialis generico 5mg
spedra 100 mg vendita
tadalafil 5 mg acquisto online
spedra 200 mg prezzo 8 compresse
avanafil 100 mg
spedra 200 mg a cosa serve
effetti cialis 5 mg
spedra 100 mg a cosa serve
What does that means?
avanafil prezzo
cialis 20 mg prezzo
avanafil 100 mg prezzo
cialis 10 mg
spedra 200 mg
cialis effetti benefici
avanafil dove comprarlo
spedra online
tadalafil 5 mg miglior prezzo
spedra 100mg
cialis da 5 mg prezzo
cialis generico 5mg
spedra 100 mg vendita
tadalafil 5 mg acquisto online
reduslim kaufen
spedra 200 mg prezzo 8 compresse
avanafil 100 mg
spedra 200 mg a cosa serve
effetti cialis 5 mg
spedra 100 mg a cosa serve
big eyes coin price prediction
spell future