হাবিবা সুলতানাঃ রমজান শুরুর আগে থেকেই তেল নিয়ে শুরু হয়েছিল এক প্রকার টানাটানি। বাজার থেকে হঠাৎ করেই গায়েব হয়ে গিয়েছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় সয়াবিন তেল। সংকট এতটাই তীব্রতর ছিল যে একসাথে ১-২ লিটারের বেশি তেল বিক্রি করা হচ্ছিলো না। কেউ কেউ তো তেলের বোতল হাতে পেয়ে অস্কারবিজয়ী হাসি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিজেদের ছবি পোস্ট করছিলো।
সেসময় এর কারন হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করা হয়। এরপর বিপুল পরিমাণ তেল আমদানী ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কড়া নজরদারিতে তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু রমজান শেষে আবারও তেল সংকটে বাংলাদেশ। রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে একটিই চিত্র উঠে আসে বাজারে নেই বোতলজাত তেল। বিক্রি হচ্ছে খোলা তেল।

দোকানিদের প্রশ্ন করলে তারা টপ নিউজকে বলেন, বারবার তেল চেয়েও তেল পান নি তারা। বসুন্ধরা, ফ্রেশ, রূপচাঁদার মতো নামকরা ব্র্যান্ডগুলোর তেল বাজারে নেই বললেই চলে। অন্যদিকে সানফ্লাওয়ারের মতো ব্র্যান্ডগুলো চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অতি অল্প এবং দাম সাধারণের নাগালের বাইরে। তেল চাইলে ডিলারদের কাছ থেকে পাওয়া যায় নি কোনো জবাব।

শুধু রাজশাহী নয়, এই চিত্র রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগর চট্টগ্রামসহ সারাদেশের। দোকানিরা বলছে তেল দিচ্ছে না ডিলাররা, ডিলারদের অভিযোগ মিল থেকে আসেনি তেল। অথচ মিল থেকে বলা হচ্ছে চাহিদানুসারে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে কি মিল থেকে ডিলার পর্যন্ত আসার পথেই কোন জাদু বলে হারিয়ে যাচ্ছে তেল!
অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের হিসাবে, এ বছরের মার্চ এবং এপ্রিল এই দুই মাসে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ৯২ হাজার টন, যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আবার একই সময়ে অর্থাৎ ১ মার্চ-২৮ এপ্রিল সময়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার টন সয়াবিন তেল বন্দরের কাস্টম বন্ডেড ট্যাংক টার্মিনাল থেকে খালাস করেছে কোম্পানিগুলো। তাহলে তেলের এই সংকট কোনো জাদুকরের তেল নিয়ে তেলেসমাতিই প্রতীত হয়।
এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই রাজধানীতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক অভিযানে সামনে আসে তেল তেলেসমাতির সত্যতা। ঈদের পর বাড়বে তেলের দাম তাই বেশি লাভের আশায় এখন তেল গুদামজাত করছে ডিলাররা। একারনেই সৃষ্টি করা হয়েছে তেলের এই কৃত্রিম বাজার সংকট। তেল মজুদের জন্য রাজধানীর সয়াবিন তেল মজুত করায় তিন ব্যবসায়ীকে ২ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।