সর্বশেষ

36.2 C
Rajshahi
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

মহান মে দিবস আজ

টপ নিউজ ডেস্কঃ আজ মহান মে দিবস। মে দিবস হচ্ছে সারা পৃথিবীব্যাপী সাড়া জাগানো আলোড়ন সৃষ্টিকারী শ্রমিক সংগঠনের ন্যায্য অধিকার আদায়ের চিরস্মরণীয় অত্যন্ত মর্মাহত একটি বিশেষ দিন। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমূহের শ্রমিকদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছিল। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এখন বিশ্বব্যাপী মহান মে দিবস নিয়মিতভাবে পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটি প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা’।

মে দিবস প্রথমত ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা শিকাগো শহরের হে মার্কেটের ম্যাসাকার শহীদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে পালিত হয়। সেদিন দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে শ্রমিকরা জমায়েত হয়েছিল। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাত নামা বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। যার ফলে প্রায় ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়।

১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক এর প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন  রেমন্ড লেভিন। এরপর ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে মে দিবস পালিত হয়।

এরপর ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায়ের জন্য একটি প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পহেলা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রার আয়োজন করতে সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের ট্রেড ইউনিয়ন প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সেই সম্মেলনে শ্রমিকদের হতাহতের সম্ভাবনা না থাকলেও বিশ্বজুড়ে সকল শ্রমিক সংগঠন মে মাসের ১ তারিখে বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। উল্লেখিত ভাবে অনেক দেশের শ্রমজীবী জনতার মে মাসের ১ তারিখকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানায় এবং অনেক দেশেই এটা কার্যকর হয়।

বাংলাদেশের ইতিহাসে মে দিবস পালিত হওয়ার নিমিত্তে বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের কথা উঠলেই সবার মনে প্রথমে মনে হয় পাটকল শ্রমিকদের কথা। বাংলাদেশে যেখানে সর্বপ্রথম মে দিবসের সূত্রপাত ঘটে। একসময় নারায়ণগঞ্জে আদমজী পাটকলের শ্রমিকদের যে প্রভাব ছিল তা অবশ্য এখন অনেকটা রূপকথার মত মনে হয়।

১৯৭০ থেকে ৮০ দশকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিক ধর্মঘটে জনজীবন স্থবির হয়ে যেত। ১৯৯০ সালের পর থেকে কাল ক্রমেই শ্রমিক রাজনীতির ধরন পরিবর্তিত হতে থাকে। ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কারের পথ ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংকুচিত হয়ে বেসরকারি খাত বিস্তৃত হতে থাকলে, শ্রমিক আন্দোলনও পরিবর্তন আসতে থাকে।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-এর গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ধারা পরিবর্তনের সাথে শ্রমিক আন্দোলন পাল্টে যেতে থাকে। সরকারি খাতের ভূমিকা যত কমেছে বেসরকারি খাতের ভূমিকা তত বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি খাত চলে আসার পরেও সেখানে শ্রমিকদের নিজেদের মতো করে সংগঠনটির করা বা সংগঠনের মাধ্যমে অধিকার জানানো সেটি না হওয়ার কারণে প্রায়ই তাদের রাস্তায় গিয়ে আন্দোলন করে দাবি আদায় করতে হয়।

দেশে বা বিদেশে শ্রমিক আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই ছিল শ্রমের সঠিক মর্যাদা, শ্রমের ন্যায্যমূল্য, শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা। কার্যতভাবে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী মে দিবস উদযাপিত হলেও আজও শ্রমিকের করুণ আকুতি শোনা যায়। দেখা যায় শ্রমের অসমতা, শ্রেণীকরণ ও অমর্যাদা। পরিবর্তন শুধু রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে নয় পরিবর্তন প্রয়োজন সামাজিক ও ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গীর। তবেই আসবে কবির শুভদিন। তবে আমরা বলতে পারবো:

সকল কালের সকল দেশের সকল মানুষ আসি

এক মোহনায় দাঁড়াইয়া শোনো এক মিলনের বাঁশী।

সম্পাদনায়ঃ হাবিবা সুলতানা

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles