সর্বশেষ

42.8 C
Rajshahi
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

রাজশাহী নগরীর উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান

হাবিবা সুলতানাঃ রাজশাহীতে বেড়াতে এসেছেন কিন্তু কোথায় যাবেন ভাবছেন ? মাথায় বড় বড় স্থাপত্যের নাম কিন্তু নগরীর বাইরে যেতে চাইছেন না কিংবা সময় স্বল্পতার জন্য নগরীর বাইরে যেতে পারছেন না, আজ আপনাদের জানাবো নগরীর মধ্যে অবস্থিত উল্লেখযোগ্য পাঁচটি দর্শনীয় স্থানের কথা।

রাজশাহী বড়কুঠি

রাজশাহী বড়কুঠি, আমাদের এই অঞ্চলের সর্বপ্রাচীন স্থাপত্য। এটি অবস্থিত নগরীর সাহেব বাজার এবং রাজশাহী কলেজের দক্ষিণে এবং পদ্মা নদীর উত্তর পাড়ে।

এর সঠিক নির্মাণকাল জানা না গেলেও ধারণা করা হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ওলন্দাজ বা ডাচ রেশম ব্যবসায়ীরা এর নির্মাণ করে। পরবর্তীতে এই কুঠি প্রথমে ১৮১৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হস্তাগত হয় এবং পরে  ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রশাসনিক ভবন হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

প্রকৃতপক্ষে, ডাচ ব্যবসায়ীরা জরুরী সময়ে স্থাপত্যটি দুর্গ হিসাবে ব্যবহার করত। এইজন্য স্থাপত্যটিতে বেশ কয়েকটি কামান ছিল। এই স্থাপত্যের তিনটি পুরাতন কামান রাজশাহী পুলিশ লাইনে সংরক্ষিত আছে।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। জাদুঘরটি অবস্থিত মহানগরের কেন্দ্রস্থল হেতেম খাঁতে।

১৯১০ সালে নাটোরের জমিদার শরৎ কুমার রায় (দিঘাপাতিয়া রাজপরিবার), রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রামপ্রসাদ চন্দ্র এবং আইনজীবী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় বাংলার ঐতিহ্য ও নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি গঠন করেন। সেসময়ে তাঁরা রাজশাহীর বিভিন্ন স্থান থেকে ৩২টি দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করেন। এরপর শরৎ কুমার রায় নিজস্ব দান করা জমিতে জাদুঘরটির ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন, যা শেষ হয় ১৯১৩ সালে। সেই বছরই  বাংলার তৎকালীন গভর্নর কারমাইকেল জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন।

এ জাদুঘরের সংগ্রহ সংখ্যা ৯ হাজারের বেশী। এখানে মহেনজোদারো সভ্যতার প্রত্নতত্ত্ব, পাথরের মূর্তি, ভৈরবের মাথা, একাদশ শতকে নির্মিত বুদ্ধ মূর্তি, গঙ্গা মূর্তি সহ অসংখ্য মূর্তি এই জাদুঘরের অমূল্য সংগ্রহের অন্তর্ভুত। এছাড়াও মোঘল আমলের রৌপ্র মুদ্রা, চন্দ্রগুপ্তের গোলাকার স্বর্ণমুদ্রা, সম্রাট শাহজাহানের গোলাকার রৌপ্য মুদ্রা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশী পুঁথি।

হজরত শাহ মখদুম রুপোশ (রহঃ) এর মাজার

বাংলার প্রথিতযশা সুফী সাধক এবং ধর্ম-প্রচারকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শাহ মখদুম রূপোশ। তাঁর মাজার বর্তমান রাজশাহী শহরের দরগাপাড়ায়, যার দক্ষিণে রয়েছে প্রমত্তা পদ্মা নদী এবং পূর্বে রাজশাহী কলেজ অবস্থিত।

হযরত শাহ মখদুম রূপোশ ছিলেন হযরত আলী এর বংশধর এবং বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী ছিলেন তাঁর আপন দাদা। তিনি ১৩০০ থেকে ১৪০০ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেছিলেন।

টি বাঁধ ও পদ্মার তীর

রাজশাহীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ইংরেজী বর্ণ টি-এর আকৃতির গ্রোয়েন ও নদীর তীর। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বিকেলবেলা নীল আকাশের নিচে পদ্মার বুকে সূর্যের সোনালী কিরণের খেলা দেখতে ভীড় জমায়। পদ্মার হিমেল হাওয়া গায়ে মেখে সারা দিনের অবসাদ দূর করে নগরীর মানুষ। অনেকেই নৌকায় ঘুরে আসেন পদ্মার ওপারে।

শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা

নগরবাসীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ও শিশুপার্ক শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকার জিরো পয়েন্ট থেকে আনুমানিক ৩ কিলোমিটার দূরত্বে রাজপাড়া এলাকায় এটি অবস্থিত।

ব্রিটিশ আমলে যে ময়দানে ঘোড়দৌড় বা রেসকোর্স ছিল সে মাঠই এখন  রাজশাহীর কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। ১৯৭২ সালে তৎকালীন মন্ত্রী শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান ও জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ প্রায় ৩৩ একর ভূমিতে এ উদ্যানটি গড়ে তোলেন।

প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শনে সমৃদ্ধ রাজশাহী জেলা। ঐতিহ্য ও প্রকৃতির অপরূপ মিশ্রন ঘটেছে পদ্মা পাড়ের এই জেলাটিতে। রাজশাহীতে বেড়াতে এলে কিংবা অবস্থান করলে অবশ্যই ঘুরে আসবেন এই দর্শনীয় স্থানগুলো।

উৎসঃ ট্যূর টুডে বাংলাদেশ ও উইকিপিডিয়া

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles