শাহাদত হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে ইদের বাজারে ঢিলেঢালা যাচ্ছে লাচ্চা সেমাইয়ের বাজার। শাক সবজি , চাল ডাল, মাছের দাম অপরিবর্তিত। নাগালের মধ্যে থাকছে না ভোজ্য তেল সয়াবিন। পূর্ব অর্ডারে সয়াবিন তেল নিতে হচ্ছে বলে জানান ক্রেতা ক্রেতারা।
শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেলো এমন চিত্র। সাহেব বাজাররে জান্নাত স্টোরের মুরাদ নামের এক মুদি দোকানি বলেন,“ গত বছরের তুলনায় এবছর প্রতি কেজি লাচ্চা সেমাইয়ের ২০ থেকে ৪০ টাকা দাম বেড়েছে। এবছর লাচ্চা ১৬০ টাকা এবং সেমাই ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ইদের ২ ,৩ দিন বাকি। এখনো লাচ্চা সেমাইয়ের বেচাবিক্রি খুব ভালো শুরু হয়নি। সারাদিনে ৪ জন ক্রেতা এসেছিল। বিশেষ করে সয়াবিন তেলের বাজারে আগুন লেগেছে। তেলের দাম বাড়ার ফলে সব পন্যের দাম বেড়েছে। এই সুযোগে অনেক দোকানিরা ব্যবসা পুষিয়ে নিতে নানা তালবাহানা করছেন। ”
লক্ষীপুর কাঁচা বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুদি দোকানি জানান, ৫ লিটার এক বোতলের দাম ৭৬০ টাকা। সেটা যখন খোলা তেল হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে সেখানে লাভ থাকছে ১৪০ টাকা। এখন বাজারে তেলের দাম বাড়ার ফলে বড় বড় ডিলারেরা বোতলের তেল মজুদ করছেন। সেই তেল খোলা আকারে বিক্রি করছেন তারা। সাধারন মুদি দোকানিরা তেল পাচ্ছেন না। বর্তমানে যেটুকু তেল পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো প্রতি কেজি ১৯৬ থেকে ২০০ টাকা এবং ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে।”
শাকসবজি ও মাংসের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে বাজারে আসা শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, “ সব পণ্যের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। গরুর মাংসের কেজি আজ ৭০০ টাকা। গত সপ্তাহে ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। মশলার মধ্যে জিরার দাম ২ সপ্তাহ থেকে বেড়েই আছে। তেলের বাজারে সংকট। আজ সয়াবিন তেলের অর্ডার দিলাম। আগামিকাল সন্ধ্যায় পাবো। যা পাওয়া যাচ্ছে তা আমাদের মত মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।”
চালের দাম অপরিবর্তিত আছে। ডালের দাম এমনিতেই বাড়তি। শিরোইল বাজার ঘুরে দেখা গেছে আটা ৩ টাকা বেড়ে ৩৫ টাকা, কিচমিচ ৪০০ টাকা, খোরমা ১২০ টাকা, খেজুর ২০০ টাকা, দেশী চিনি ৮৬ টাকা, চিনি ৮০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১২০ টাকা, বুটের ডাল ৮০ টাকা, খেশারি ডাল ৭২ টাকা, এংকার ডাল ৫৬ টাকা, ডাবলী মটর ৫৬ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, মুগ ডাল ১০০ টাকা, কালাই ডাল ১৩০ টাকা, সোনা মুগ ডাল ১৪০ টাকা, দেশি মটর ডাল ১২০ টাকা, খেশারি বেশন ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। চালের বাজারে মিনিকেট ৬৫ টাকা, আঠাশ ৫৬ টাকা, জিরাশাল ৬০ টাকা, বাশমতি ৭৫ টাকা, নাজিরশাল ৭৫ টাকা, কালাজিরা আতব ৯০ টাকা, চিনিগুড়া ১০০ টাকা, কাটারি আতব ৮০ টাকা, পায়জাম আতব ৬০ টাকা, আউশ ও পারিজা চাউল ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে শাকসবজির বাজারে আদা, কাঁচা মরিচের দাম ২০ টাকা বেড়েছে। তবে ২০ টাকা কমেছে সজনে ও বেগুনের দাম।
নিউমার্কেট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা হলুদ ২০০ টাকা, আদা , কাঁচা মরিচ , রসুন ৮০ টাকা, পেঁয়াজ ২৫ টাকা, আলু ১৫ টাকা, লাউ ৩০ টাকা, ঢেড়স ৩০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, শশা ২০ টাকা, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, সজনে ৬০ টাকা, ফুলকপি ১২০ টাকা, কাকরোল ১০০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, কচু ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
গত সপ্তাহে গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ৫০ টাকা বেড়ে ৭০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মাংসের বাজারে খাশির মাংস ৯০০ টাকা, ছাগলের মাংস ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা, গরুর মাংস ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মুরগির মাংসের দাম কেজিতে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৬০ টাকা, সোনালী মুরগি ২৬০ টাকা থেকে ২৭০ টাকা, সাদা লেয়ার মুরগি ২১০ টাকা, লাল লেয়ার মুরগি ২৫০ টাকা, দেশি হাঁস ৩২০ টাকা, রাজহাঁস , চিনা হাঁস ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ সপ্তাহে মুরগির সাদা ডিম ২৮ টাকা, মুরগির লাল ডিম ৩২ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ৫০ টাকা, হাঁসের ডিম ৩২ টাকা এবং কোয়েল পাখির ডিম ১০ টাকা হালি বিক্রি হয়েছে।
মাস্টারপাড়া কাঁচা বাজারে জনি নামের একজনের কাছে কেনাকাটা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, “ আমি নিজেও দোকানদার। মাংস কিনতে এসেছিলাম। এই বাজারে কেনাকাটা করতে আসলে সমস্যা হয়। তারপরও আসতে হয়। একই জিনিসের দাম ভিন্ন রকম। যার কাছ থেকে যেমন দাম চেয়ে বসেন বিক্রেতারা। মূল্য তালিকা আড়ালে লুকিয়ে রাখে। ম্যাজিস্ট্রেট আসলে বের করে রাখেন। অনেকেই তালিকায় হাত ও দেয়না। এত করে ক্রেতারা বিভ্রান্তিতে পড়েন।”
ক্রেতাদের চাহিদা কমে যাওয়ার মাছের দাম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে। মাছের মধ্যে ফলি ৩০০ টাকা, পাবদা ১৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, মিড়কা ১৬০ টাকা, শিং মাছ ৩০০ টাকা, আইকোড় ১৪০ টাকা, ট্যাংরা ২৫০ টাকা, শোল ৩০০ টাকা, বোয়াল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙ্গাস ১২০ টাকা, আইড় ৩৫০ টাকা, সিলভার ১৫০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হয়েছে।