শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি: শ্রীনগরে আড়িয়াল বিলে মাটি খেকো সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য মো. তাছু ও তার সহযোগীদের তান্ডবে প্রায় ৩০০ হেক্টর ধানি জমি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার বাড়ৈখালী ইউনিয়নের মদনখালী নতুন খালপাড়ের মাটি কাটার ফলে জোয়ারের পানি ফসলী জমিতে ঢুকে যায়। এতে প্রায় অর্ধকোটির টাকার লোকসানের মুখে পড়ে ধান চাষিরা। হেলাল, নাসির, রঞ্জিত, হারুন, সুফিয়া বেগম, হাসিম খান, চান্দু মিয়া, মনোয়ারা বেগম, রফিক দেওয়ান, কাইয়ুম খান, জাকিরসহ ওই এলাকার ভুক্তভোগী ধান চাষিরা মাটি ব্যবসায়ী তাছু ও তার সহযোগী মো. শিপনের বিরুদ্ধে এমনটাই অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় গত রবিবার উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আড়িয়াল বিল এলাকার খননকৃত খালের পাড়ের মাটি বিক্রির জন্য স্ক্যাভেটর মেশিন দিয়ে যত্রতত্রভাবে কাটা হয়েছে। অতিরিক্ত মাটি কাটার ফলে খালের পানি বিলের ৩০০ হেক্টর ধানের জমি পানিতে ডুবে নষ্ট হয়। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সোনালী ফসল ঘরে তুলার কোন সম্ভাবনা নেই। নিরীহ কৃষক প্রভাবশালী মাটি সিন্ডিকেটটির ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পর্যন্ত পাচ্ছেনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাটি খেকো তাছু ও শিপনের নেতৃত্বে প্রায় ৫০ জনের একটি মাটি সিন্ডিকেট শুষ্ক মৌসুমে বির্স্তিণ আড়িয়াল বিলের গভীরে স্ক্যাভেটর মেশিন দিয়ে ফসলী জমির মাটি কেটে বিশালাকারে স্তুপ করে রাখে। খালে জোয়ারের পানি আসার সাথে সাথে এসব স্তুপের মাটি বাল্কহেডে করে বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রি করে কোটি টাকার বাণিজ্য করে মহলটি।

সূত্রমতে জানা গেছে, তাছু সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য মো. শিপনের স্ক্যাভেটর দিয়ে গত ১৬ এপ্রিল গভীর রাতে মদনখালী খাল পাড়ের মাটি কাটার ফলে এসব ধানি জমি পানিতে ডুবে যায়।
এ বিষয়ে তাছু দেওয়ানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রায় দুই মাস ধরে আমার মাটির ব্যবসা বন্ধ। ঐখানে শিপনের একটি ভেকু ছিল।
মো. শিপনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি খালের পাড় কাটিনি। স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরার স্বার্থে খাল পাড়ের মাটি কাটে।
হাবিব নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার ডেঙ্গার পাড় কেটে শিপন ভেকু নেয়ার ফলে ডেঙ্গার ব্যাপক পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধানি জমিতে পানি ডুকেছে খাল পাড়ের মাটি কেটে নেওয়ার ফলে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইকবাল হোসেন মাস্টার জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। গত বছর খালটি জাইকা’র অর্থায়নে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যায়ে আড়িয়াল বিলের খালটি পুনঃখনন করা হয়। পুরো খালের দুই পাড়ের মাটি কেটে মাটি সিন্ডিকেটটি বিক্রি করে দেয়।

বাড়ৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফারুক হোসেন এ ব্যাপারে জানান, ঘটনাটি অতি দুঃখজনক। খালপাড়ের মাটি কেটে নেয়ার ফসলী জমিতে পানি ঢুকে পরে। উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শান্তনা রানী জানান, পানি ঢুকার কারণে প্রায় ৩০০ হেক্টর ধানি জমি ডুবে ফসল নষ্ট হয়। আমি বিষয়টি উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণব কুমার ঘোষ এ ব্যাপারে জানান, এ বছর ১৫ দিন আগেই খালে জোয়ারের পানি এসে গেছে। অতিরিক্ত মাটি কাটার ফলে জোয়ারের পানিতে জমি প্লাবিত হয়। এর সাথে জরিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।