সর্বশেষ

43.3 C
Rajshahi
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

সাতক্ষীরায় প্রথম দুম্বার খামার গড়ে সাফল্য

রিজাউল করিম (সাতক্ষীরা প্রতিনিধি): [১] বাংলাদেশের দক্ষিন পশ্চিম উপকুলীয় শেষ জেলা সাতক্ষীরায় প্রথম বারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের প্রাণি দুম্বার খামার গড়ে সাফল্য পেয়েছেন মৎস্য ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম খোকা।

[২]ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম খোকা সাতক্ষীরা শহরের লষ্করপাড়া এলাকার মৃত কাজী আব্দুল মোকিতের ছেলে। জেলা শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার আঁগড়দাড়ি ইউনিয়নের চুপড়িয়া গ্রামে তিনি এই দুম্বার খামারটি গড়ে তুলেছেন।

[৩]এখন খামারটি বড় পরিসরে গড়ে তোলার স্বপ্ন তাঁর। ভেড়া-ছাগলের মতই এটি লালন-পালন করা যায়। এছাড়া গরু খামারের চেয়ে অধিক লাভবান হওয়ার আশায় গত সাত মাস আগে থেকেই তিনি দুম্বা পালন শুরু করেন। এদিকে, দুম্বা দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছেন তার খামারটিতে।

[৪]ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম খোকা জানান, ২০১০ সাল থেকে তিনি সেখানে ৫০ বিঘা জমির উপর মৎস্য চাষ শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি সেখানে গরুর খামারও তৈরী করেন। কিন্তু গরুর থেকে দুম্বায় বেশী লাভবান হওয়া সম্ভব, ছেলের এমন পরামর্শে তিনি সেখানে দুম্বার খামার করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

[৫]একপর্যায়ে গত সাত মাস আগে তিনি পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ৪ লাখ টাকায় দুটি দুম্বা ক্রয় করেন। তার থেকে একটি বাচ্চা হয়েছে। সেটির মূল্য এখন দেড় লাখ টাকা। এছাড়া গত দেড় মাস আগে ঢাকার জয়দেবপুর এলাকা থেকে তিন লাখ টাকা দিয়ে আরও দুটি দুম্বা নিয়ে এসেছেন। বর্তমানে তার খামারে পাঁচটি দুম্বা রয়েছে। খামারটি দেখভাল করার জন্য একজন শ্রমিকও নিয়োজিত করা হয়েছে। প্রত্যেকটি দুম্বার পেছনে দৈনিক ৬০ টাকা খরচ হয়। পাঁচটির পেছনে প্রতিদিন ৩০০ টাকা খরচ। স্বাভাবিক ছাগল-ভেড়া যেসব খাবার খায় দুম্বাও সেগুলোই খাচ্ছে। বাড়তি বা ভিন্ন কোন ধরণের খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। সহজেই লালন পালন করা যায়। রোগ বালাইও নেই বলা যায়। গত সাত মাসে এখনো কোন দুম্বা রোগাক্রান্ত হয়নি। এখন প্রতিদিন বিভিন্নস্থান থেকে উৎসুক জনতা এগুলো দেখতে আসেন। অনেকেই দুম্বা পালনের বলে পরামর্শ নেন।

[৬] ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম খোকা আরো জানান, একটি মেয়ে দুম্বা ছয় মাস পর পর বাচ্চা দেয়। বছরে একটি মেয়ে দুম্বা থেকে দুইটা বাচ্চা পাওয়া যাবে। ৫-৬ মাস বয়সী একটি বাচ্চার মূল্য দেড় লাখ টাকা। তার পরিকল্পনা রয়েছে খামারটি বড় পরিসরে করার। সেই হিসেবে প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছেন তিনি। শখ করেই খামারটি করলেও এটি একটি লাভজনক ব্যবসা বলে তিনি জানান। তার খামারের পাঁচটি দুম্বার মূল্য বর্তমানে সাড়ে ৮ লাখ টাকা।

[৭]খামারটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা শ্রমিক আশরাফ আলী জানান, দিনে দুইবার খাবার দেওয়া হয় সকাল ও বিকেলে। ঘাস, আমেরপাতা, কলার পাতা, ভুষি এসব খায় দুম্বা। ছাগলের মত লালন পালন করতে হয়। ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। তবে খুব তেজি প্রাণি এটি, এদের শক্তিও অনেক। ক্ষেপে গেলে তেড়ে আসে তখন সামলানো যায় না। এখন প্রতিদিন দুম্বা খামারটি দূর দূরান্ত থেকে দেখতে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। কেউবা খামার গড়ে তোলার জন্য পরামর্শও নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।

[৮]আগড়দাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আশিকুর রহমান জানান, তিনি আগে কখনো দুম্বা দেখেননি। সাতক্ষীরার এই প্রথম দুম্বার খামার তিনি দেখছেন। তিনি এটি দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনিও একটি খামার গড়ে তুলবেন। সেখান থেকে পরামর্শও নিয়েছেন। তবে প্রত্যেকটি দুম্বার দাম অনেক বলে তিনি জানান।

[৯]সাতক্ষীরা জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. এবিএম আব্দুর রউফ জানান, এটা সৌদি আরবের প্রাণি। বিশেষ করে কুরবানীর সময় পশুটির চাহিদা প্রচুর বেড়ে যায়। বাংলাদেশেও এটা সম্ভাবনাময় একটি প্রাণি সম্পদ। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার আবহাওয়ায় পশুটি পালন উপযোগী। এতে একদিকে যেমন আমিষের চাহিদা পূরণ করবে, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও লাভবান করবে খামারীদের। এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles