সর্বশেষ

24.3 C
Rajshahi
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

ই-মুভি স্ক্যাম : ৪০০ কোটি টাকা লোপাট, নিঃস্ব হাজার হাজার মানুষ

টপ নিউজ ডেস্কঃ ই-মুভি প্ল্যান নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি একটি চক্র দেশের ১৬টি জেলার প্রায় ৪০ হাজার মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম একাত্তর টেলিভিশনের এক অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গেলো এক বছরে কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা হাতিয়ে এই চক্রটি উধাও হয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে এই পুরো টাকাই বিদেশে পাচার হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ সর্বস্ব খুইয়েছেন। লোভ করতে গিয়ে অনেকে হয়েছেন ফকির।

কেস স্টাডিতে জানা যায়, তাইফুর রহমান নামের এক চা বিক্রেতা যিনি ৩০ বছর ধরে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের পাশে চা বিক্রি করছেন। স্বল্প আয় হলেও স্বাভাবিকভাবেই জীবন চলছিলো। গত ডিসেম্বরে(২০২২) দোকানের এক কাস্টমারের মাধ্যমে তিনি ই-মুভি প্লান নামের একটি অ্যাপ সম্পর্কে ধারণা পান। সেখানে টাকা দিলেই লাভ আসে কয়েকগুণ, তাও আবার ডলারে। প্রথমে অল্প কিছু লাভ পাওয়ায়, তিনি আরো বেশি লাভের আশায় ঋণ করে এক লাখ টাকা লগ্নি করেন। এরপর থেকে সেই অ্যাপের আর কোনো হদিস নেই।

এ তথ্য জানার পর একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ দল রাজশাহীর কোথায় কোথায় এই অ্যাপের কার্যক্রম চলছে তা জানতে অনুসন্ধানে নামে। এতে খুঁজে পাওয়া যায় একটি তালিকা। সেখানে ঢাকা, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁসহ দেশে ১৬ জেলার এই অ্যাপটির ৩২ জন প্রতিনিধির নাম ও ঠিকানা বেরিয়ে আসে। এই তালিকা ধরেই ই-মুভির রাজশাহী সিটি পার্টনার পরিচয় দেওয়া রাশিদুল ইসলামকে রাজশাহী মহানগরীর কয়েরদাড়া এলাকায় পাওয়া যায়।

একটি বে-সরকারি জুট মিলে কর্মরত রাশিদুল বলছেন, একই প্রতিষ্ঠানে কাজের সুবাদে আজমুল হুদা মানিকের সাথে তার পরিচয় হয়। মানিকের হাত ধরেই ই-মুভির সাথে জড়িয়ে পড়েন। রাশিদুলসহ বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সংক্রামক ব্যাধির মত শহর ও গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়েছে ই-মুভি অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা। আরো ভয়াবহ সিটি কর্পোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের নারিকেলবাড়িয়া এলাকার অবস্থা। এই অ্যাপে আসক্ত শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই।

গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী ইউনিয়নে গিয়েও অসংখ্য ভুক্তভোগী পাওয়া যায়। মোটা অংকের টাকা খুইয়ে লোক-লজ্জার ভয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না এখানকার অনেক ব্যবসায়ী। এখানে জানা যায় শিহাব, তৌফিক এবং ওমর ফারুকের নাম। অ্যাপ বন্ধের পর পরই গাঢাকা দিয়েছে শিহাব, তৌফিক এবং ফারুক।

এছাড়া নওগাঁ জেলার ৩টি উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ কোটি কোটি টাকা খুইয়েছেন। ফরহান আহমেদ ও তৌফিক আহমেদ ছিলেন এই জেলার দায়িত্বে। অনুসন্ধানী দলটি কথা হয় রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের অন্তত ২ হাজার ভুক্তভোগীর সাথে। তবে এই অ্যাপের মূল মালিক কে তারা কেউই জানে না।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, গত ৭ জানুয়ারি হোটেলে সিটি পার্টনার ও বড় বিনিয়োগকারীদের নিয়ে ঢাকার একটি পাঁচ তারকা একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেখানে দেশ-বিদেশ থেকে তিন পুরুষ এবং একজন নারী অংশ নেন- যারা ই-মুভির ভাইস প্রেসিডেন্ড, এশিয়ান কাউন্ট্রি ডিরেক্টর ও গণসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। এদের মধ্যে একজন মাইকেল, যিনি ই-মুভির বিভিন্ন অফার সম্পর্কে বিভিন্ন সময় ফেসবুক লাইভে এসে গ্রাহকদের ধারনা দিতেন।

হোটেলটির কর্তৃপক্ষ জানায়, কোন প্রতিষ্ঠান নয় বরং একজন ব্যক্তি নগদ টাকায় ভাড়া নেয় সাততলার সম্মেলন কক্ষটি। তবে কর্তৃপক্ষ তার নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অনেকে ইমুভিপ্ল্যান অ্যাপের মাধ্যমে কোটি টাকার উপরও খুইয়েছেন। আর হাজার হাজার লোক হারিয়েছে লাখ টাকা, যার মধ্যে বেশিরভাগই ধার বা ঋণের মাধ্যমে জোগাড় করেছিলেন তারা।

ব্রায়ান জন ও মাইকেল নামে দুজনের নাম প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জানা গেছে। এছাড়াও এটির প্রচারণা চলতো ‘অল ইভেন্টস ডট ইন’ নামের একটি পেইজ থেকে। অনুসন্ধান বলছে, এই অ্যাপের মাধ্যমে দেশের ১৬ জেলার কমপক্ষে ৪০ হাজার মানুষ ৪০০ কোটি টাকা খুইয়েছেন এবং ধারনা করা হচ্ছে ধারনা করা হচ্ছে এই অর্থ দেশের বাইরে চলে গেছে।

আইটি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জালিয়াতি চক্রের মূলহোতারা বাংলাদেশি নন, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সক্রিয় অভিযান প্রয়োজন তাদের খুঁজে বের করতে।

সম্পাদনায়ঃ হাবিবা সুলতানা

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles