সর্বশেষ

36.1 C
Rajshahi
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

এভাবেই আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা

টপ নিউজ ডেস্কঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমানের সার্জেন্ট জহুরুল হক) ১১৬ নম্বর কক্ষে একে একে জড় হচ্ছেন আ স ম আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমেদ, স্বপন কুমার চৌধুরী, হাসানুল হক ইনু, শিব নারায়ণ দাস, মার্শাল মনিরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন নেতা।দেশে তখন নির্বাচন নিয়ে তোরজোড় চলছে, কিন্তু সেদিনের আলোচনা নির্বাচন নিয়ে ছিলো না।

সময়টা ৬ জুন ১৯৭০।

কাজী আরেফ আহমেদের প্রাথমিক প্রস্তাবনায় পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। পতাকার ডিজাইন ঠিক করা হয়েছিল সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্য, তার মধ্যে হলুদে খচিত বাংলাদেশের মানচিত্র। হলুদ ঠিক নয়, হওয়ার কথা ছিলো সোনালী, সোনার বাংলা তাই। সে রাতেই নিউমার্কেট থেকে সবুজ কাপড় কিনে তার মধ্যে লাল বৃত্ত সেলাই করে নিয়ে যাওয়া হয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বুয়েট) তৎকালীন কায়েদ আজম হলে (বর্তমান তিতুমীর হল)।

এরপর তা নেওয়া হয় শেরে বাংলা হলে।

রাত ১১টা,

প্রকৌশলীর ছাত্র ও কুমিল্লা জেলার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শিবনারায়ণ দাস সূক্ষ্ম হাতে সম্পন্ন করে পতাকার সম্পূর্ণ ডিজাইন। এরপর নিউমার্কেটের নিউ পাক ফ্যাশন টেইলার্সে গিয়ে বানানো হয়েছিল নতুন পতাকা, বসানো হয় লালের বুকে সোনার বাংলা।

এভাবেই তৈরি হয় আমাদের প্রানের পতাকা।

৭ জুন বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেওয়া হয় সেই পতাকা। সে উপলক্ষে কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। কুচকাওয়াজের নেতৃত্বে ছিলেন আ স ম আব্দুর রব। তিনিই পতাকা তুলে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর হাতে। বঙ্গবন্ধু নিজে সেই পতাকা ছাত্র-জনতার সামনে তুলে ধরেন।

তবে পতাকাটি রাখা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তাই হাসানুল হক ইনু পতাকাটি তার রুমে নিয়ে সহপাঠী শরীফ নুরুল আম্বিয়াকে দিয়েছিলেন, আম্বিয়া দিয়েছিলেন তার বন্ধু শেরে বাংলা হলের খবিরুজ্জামানকে। পরে সেই পতাকা ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেনের মালিবাগের বাসায় লুকানো হয়।

এরপর ‘৭০-এর নির্বাচন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়, পাকিস্তানের শঙ্কা, ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা এবং সবশেষে ১ মার্চ ১৯৭১-এ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত ঘোষণা।

বিক্ষোভে ফেঁটে পড়ে জনতা। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ছাড়াই মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে। ঘোষণা হয় ২ মার্চ থেকে ৩ মার্চ দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল চলবে।

২ মার্চ ১৯৭১,

কলাভবন প্রাঙ্গণের বটতলা,

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সংগ্রামী ছাত্র সমাজের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশে বেলা ১১টার দিকে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ডাকসুর ভিপি আ স ম আব্দুর রব। সেসময় ছাত্রলীগের নেতা শেখ জাহিদ হোসেন একটি বাঁশের মাথায় পতাকা বেঁধে মঞ্চে এলেন।

২ মার্চের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তির বীজ বপন হয়েছিল। সেদিন দুপুরে ও রাতে যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সচিবালয়ে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয়েছিল। রাতে পাকিস্তান রেডিওতে ঢাকায় কারফিউ জারির ঘোষণা আসে।

কিন্তু কারফিউ ভঙ্গ করে ছাত্র শ্রমিক জনতা শহরের বহু জায়গায় ‘কারফিউ মানি না’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’সহ নানা স্লোগানে বিক্ষোভ করেছিল। ছাত্র যুবক জনতা কারফিউ ভেঙে গভর্নর হাউজের দিকে যেতে শুরু করলে ডিআইটি মোড় ও মর্নিং নিউজ পত্রিকা অফিসের সামনে মিছিলে গুলি চালায় সেনাবাহিনী।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩ মার্চ ১৯৭১ পল্টন ময়দানে, বিশাল জনসভায়, শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন।

সেদিন বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা শাহজাহান সিরাজ।অবশ্য বঙ্গবন্ধু নিজে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ।

তথ্য সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ২ মার্চ প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক আজাদ, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।

সম্পাদনাঃ হাবিবা সুলতানা

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles