টপ নিউজ ডেস্কঃ গত ১ মার্চ বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানের দাবির বিষয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করেছে এবং আশা করছে, এই দাবির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। এর আগে মহীসোপানের দাবির বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল ভারত ও মিয়ানমার। এরপর দুই নিকট প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তির পর, সালিসি আদালতের রায় অনুসরণ করেই জাতিসংঘের কমিশন অন দ্য লিমিটস অব দ্য কন্টিনেন্টাল শেলফে (সিএলসিএস) মহীসোপানের দাবির বিষয়ে তথ্য তুলে ধরল বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আশা প্রকাশ করে বলেছেন, নতুন করে তথ্য উপস্থাপনের পর বাংলাদেশের সম্পদ আহরণের বিষয়টির সুরাহা হবে। জাতিসংঘে মহীসোপানের দাবির পক্ষে হালনাগাদের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপনের সময় এ আশা ব্যক্ত করেন তিনি ।
এর আগে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর সিএলসিএসে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের মহীসোপানের সংশোধিত তথ্য দাখিল করা হয়েছিল।এরপর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমার এবং এপ্রিলে ভারত বাংলাদেশের ওই দাবির বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে জাতিসংঘের কাছে চিঠি দেয়।
এ বিষয়ে ভারত জাতিসংঘের মহাসচিবকে জানায়, সমুদ্রপৃষ্ঠের যে ভিত্তিরেখার ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহীসোপান নির্ধারণ করেছে, তা ভারতের মহীসোপানের একটি অংশ। তাই ভারত, জাতিসংঘের মহীসোপান নির্ধারণবিষয়ক কমিশনে বাংলাদেশের দাবিকে বিবেচনায় না নেওয়ার অনুরোধ জানায়। অন্যদিকে, মিয়ানমার জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানায় যে, বাংলাদেশ যে ভিত্তিরেখা দেখিয়েছে, তা আদালতের দেওয়া রায়ের পরিপন্থী। কাজেই বাংলাদেশের দাবি যেন বিবেচনায় নেওয়া না হয়।
এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ নিজের দাবির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে এবং ১ মার্চ এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য হালনাগাদ করা হলো।
মূলত, সমুদ্রতীরবর্তী দেশগুলোর ভূখণ্ডের যে অংশ সমুদ্রের দিকে পানির নিচে ঢালু হয়ে নেমে যায়, তাকেই মহীসোপান বলে। সমুদ্রতীরবর্তী দেশগুলোর স্থলভাগের বেসলাইন বা ভিত্তিরেখা থেকে লম্বালম্বিভাবে সমুদ্রের সাড়ে তিনশ মাইল এলাকাকে সংশ্লিষ্ট দেশের মহীসোপান হিসেবে ধরা হয় এবং এরমধ্যে ২০০ মাইল পর্যন্ত এলাকার মালিকানা সম্পূর্ণ ওই দেশের। সেখানে শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট দেশ মাছ ধরতে পারে এবং খনিজ সম্পদের দাবি করতে পারে। এই ২০০ মাইলের পর ১৫০ মাইল পর্যন্ত সীমায় সমুদ্রের তলদেশে খনিজ সম্পদের মালিক সংশ্লিষ্ট দেশই থাকে কিন্তু ওই এলাকায় সকল দেশের জেলেরা মাছ ধরতে পারে ।
বাংলাদেশের দুই নিকট প্রতিবেশী, মিয়ানমার ও ভারত যথাক্রমে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে মহীসোপান বিষয়ে তাদের দাবি উপস্থাপন করে এবং বাংলাদেশ একই বিষয়ে নিজের দাবি তুলে ধরে ২০১১ সালে। সেসময় বাংলাদেশের প্রতিবেশী দুই দেশ নিজেদের ভিত্তিরেখায় বাংলাদেশের অংশকে নিজেদের বলে দাবি করে। যদিও সেসময় পর্যন্ত দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার বিরোধের নিষ্পত্তি হয়নি। ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি হয় এবং এর প্রায় ছয় বছরের অপেক্ষা শেষে আদালতের রায় মেনে জাতিসংঘের কমিশনে মহীসোপানের সংশোধিত দাবি উপস্থাপন করে বাংলাদেশ।
সম্পাদনাঃ হাবিবা সুলতানা