টপ নিউজ ডেস্কঃ আজ ২৪ এপ্রিল, রানা প্লাজা ট্রাজেডির ৯ম বার্ষিকী। নয় বছর আগের আজকের এই দিনে ভয়াবহ এক ভবন ধসের ঘটনায় আঁতকে উঠেছিলো বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ। পৃথিবীর শিল্প কারখানার ইতিহাসের এটি ছিল অন্যতম এই ভয়াবহ মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। নিমিষেই সাভারের রানা প্লাজা হয়ে উঠেছিলো দুঃখ ও বেদনার এক শোকগাঁথা।
কিছু কিছু স্মৃতি এতটাই বেদনাবিধুর হয় যে, এমন কিছু ঘটনা কখনোই মুছে ফেলা যায় না। প্রতিবছরের বিশেষ সময়ে সে স্মৃতি মনে হতে বাধ্য হয়। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল এমনি একটি দিন। সেদিন সাভারের রানা প্লাজা ধসে মারা গিয়েছিলেন ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক এবং আহত হন কয়েক হাজার শ্রমিক। সেদিনের সেই ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন তার মাকে, কেউ তার বাবা, কেউ ভাই, বোন, তো কেউ তার স্ত্রী বা স্বামীকে।
২০১৩ সালের সেই এপ্রিলে ধসে পড়া ৯ তলা রানা প্লাজা ভবনটির ৩য় তলা থেকে ৯ম তলা পর্যন্ত ছিল পাঁচটি পোশাক কারখানা। যেখানে কাজ করতো প্রায় ৪ হাজার পোশাক শ্রমিক। ভবন ধসের সাথে সাথেই ধ্বংসস্তূপের ভেতরে চাপা পড়েন চার হাজার পোশাক শ্রমিক। তাদের কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে সাভারের বাতাস।
খবর পেয়েই সাধারণ উদ্ধার কর্মী, দমকল বাহিনী, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরপর ধ্বংসস্তূপ থেকে একে একে বের হতে থাকে জীবন্ত, মৃত ও অর্ধ-মৃত মানুষ। কয়েক ঘণ্টাতেই মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়; হাসপাতাল মর্গ ভর্তি ওঠে লাশে, তাই এসব লাশ নিয়ে রাখা হয় সাভারের অধরচন্দ্র স্কুলের মাঠে। স্কুল বারান্দায় সারিবদ্ধভাবে রেখে দেওয়া হয় লাশ। লাশের সংখ্যার হিসাব রাখাতে ঝুলানো হয় স্কোরবোর্ড। প্রিয়জনকে জীবিত না পেয়ে তাদের মৃতদেহ নেওয়ার জন্য স্বজনেরা ভিড় জমান সেই অধরচন্দ্র স্কুল মাঠে।
তবে ধসের পর দক্ষ জনবল এবং প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হতে থাকে। কিন্তু উদ্ধার কাজে ধীরগতি দেখে, কোনোকিছু না ভেবেই উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাধারণ মানুষরা। তাদের কারো ছিলো না উদ্ধারকাজের কোনো অভিজ্ঞতা। তবুও ভবনের নিচে আটকে পড়া মানুষের জীবন বাঁচানোর তাগিদে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তারা ঢুকে পড়েছিলেন ধ্বংসস্তূপের ভেতরে। পচা লাশের গন্ধ উপেক্ষা করে তারা সন্ধান করেন জীবিত প্রাণের, কিছু উদ্ধারকর্মী হযে যান অসুস্থ, কেউ কেউ মারাও গেছেন। তবে সেই মানুষগুলোর কারণেই ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে ২৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়ছিলো। এছাড়াও মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল ১১৩৮ জনের।
সম্পাদনায়ঃ হাবিবা সুলতানা