সর্বশেষ

35.7 C
Rajshahi
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ ও কবির বিন আনোয়ারকে গুণীজন সংবর্ধনা প্রদান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকঃ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার-কে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে গুণীজন সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। গত শুক্রবার(  ফ্রেরুয়ারী)  বিকেলে নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে উত্তরীয় ও ক্রেস্ট প্রদানের মাধ্যমে গুণীজনদের সংবর্ধিত করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের  মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ফুলেল শুভেচ্ছা ও গানের মাধ্যমে অতিথিবৃন্দকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়। এরআগে নগর ভবনে পৌছালে গান আর নৃত্যের তালে তালে অতিথিবৃন্দকে বরণ করে নেয়া হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদের নামে আর্ট গ্যালারি স্থাপন করতে চাই। আমাদের এই মেয়াদে আর্ট গ্যালারি স্থাপন কাজের সূচনা করতে চাই। তিনি রাজশাহীতে এসে রাজশাহীকেই ধন্য করেছেন। আমরা তাকে সংবর্ধণা দিয়ে নিজেরাই ধন্য হয়েছি। কারণ এই রকম মানুষকে সচরাচর পাওয়া যায় না, সচরাচর জন্মও নেন না।

রাসিক মেয়র আরো বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমদের যে বক্তব্য দিয়েছেন, এমন বক্তব্য আগে কখনো শুনিনি। তিনি তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যে সকল তথ্য তুলে ধরেছেন, তা আমাদের আগামী প্রজন্মকে মনে রাখতে হবে। জয় বাংলা শ্লোগান দিয়েই কিভাবে তিনি যুদ্ধে  কৌশল অবলম্বন করেছেন। জয়বাংলা এখন তাঁর প্রাত্যহিক বিষয়। এই শ্লোগানের মধ্যে কি যে শক্তি রয়েছে। স্বাধীনতার অনেকগুলি বছর পার হয়েছে। এর মধ্যে ইতিহাস বদলে দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। জামাত-বিএনপি চক্র স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছিল। ইতিহাসের খলনায়ক জিয়াউর রহমান এখানে মূল ভূমিকায় ছিল। সেই অপশক্তি দেশটাকে অস্থির-বিশৃঙ্খল করেছে, তারা থেমে গেছে এটা ভাবার কোন সুযোগ নাই, কারণ তারা দেশেই আছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে অনন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সব সময় নজর রাখছেন তিনি। যেকোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সজাগ রয়েছে।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ এবং সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার ও মিসেস তৌফিকা আনোয়ার।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেণী।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ১৯৬২ সালের পর প্রথম রাজশাহীতে পা রাখলাম। রাজশাহীর আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি রাজশাহীর এই পরিবর্তনকে একজন শিল্পীর হাতের কারুকাজের সাথে তুলনা করে বলেন, এই পরিবর্তনের শিল্পী মেয়র।

শিল্পী তার মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমরা পুরো প্রশিক্ষণ না নিয়েই যুদ্ধে নামতে বাধ্য হয়েছি। এ সময় আমাদেরকে কৌশলী হতে হয়েছে। শুধু অস্ত্র নয়, জয় বাংলা  স্লোগানে পাক হানাদার বাহিনী পালাতে বাধ্য হয়েছে। যুদ্ধের ময়দানে জয় বাংলা স্লোগনটা এমন ভাবে দেয়া হতো যেন মনে হয় শত শত মানুষ আমাদের সাথে আছেন। আসলে আমরা থাকতাম ১২ থেকে ১৩ জন। দুই সপ্তাহ পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হয়েছে। এমন সময় রাজশাহীর সন্তান এএইচএম কামারুজ্জামান আমাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে গিয়ে হাজির হয়ে আমাদের সাহস যুগাতেন। তার নায়কোচিত চেহারা আমাদেরকে উৎসাহ যোগাতো।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, যত দিন যাবে শহীদ কামারুজ্জামানের মূল্য আরও বাড়বে। যে কয় জনের নাম থেকে যাবে, তার মধ্যে শহীদ কামারুজ্জামান অন্যতম। 

রাজশাহীবাসীর আতিথেয়তায় মুগ্ধতার কথা জানিয়ে শিাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, পদ্মা পাড়ের মতো বড় নদী তীরে যারা জন্মায় তারা অন্যরকম হয়। মনে গেঁথে গেল রাজশাহী।

মন্ত্রী পরিষদের সাবেক সচিব কবির বিন আনোয়ার তাঁর বক্তব্যে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা মানে কোন ব্যক্তিকে হত্যা নয়। আবহমান বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও স্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্য এ হত্যাকান্ড। যার শুরু হয় ১৯৭১ থেকে। যারাই এদেশে আগামীর নেতৃত্ব দেবার মতো ছিলেন তাদেরককেই বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে সুদূর প্রসারী চক্রান্তের শামিল হয় এদেশের কিছু ব্যক্তি। এরপর স্বাধীন বাংলায় ৩ হাজার ৫০০ জন সেনাবাহিনীর সদস্য ও অগণিত মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়।

তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে আগামীতে আবারো আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় আনতে হবে।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিযর সহ-সভাপতি শাহীন আকতার রেণী তাঁর বক্তব্যে বলেন, গুণীজনদের সংবর্ধনা দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। তাদেরকে সংবর্ধনা দিতে পেরে আমরা নিজেরা সম্মানিত বোধ করছি। রাজশাহীতে এসে আমাদের সংবর্ধনা গ্রহণ করায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ, নাগরিক সমাজ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরবৃন্দ ও বিভাগীয় প্রধানগণ, চিকিৎসকবৃন্দ, আইনজীবীবৃন্দ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকবৃন্দ, স্কুল ও কলেজের প্রধানরা, গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে দেশ গান ও গম্ভীরা পরিবেশন করা হয়।

সম্পাদনায়ঃ হাবিবা সুলতানা

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles