টপ নিউজ ডেস্ক : রাজশাহীতে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষার জাল প্রশ্নপত্র ও প্রবেশপত্র তৈরি করে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের ১ সদস্যকে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেফতার করেছে। এসময় আসামির কাছ থেকে বিভিন্ন পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড, জীবন বৃত্তান্ত, নাগরিক সনদপত্র, পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি উদ্ধার হয়।
গ্রেফতারকৃত মো: নয়ন ইসলাম (২৫) রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার অচিনঘাট এলাকার বাসিন্দা মো: আজগর হোসেন মন্ডলের ছেলে। নয়ন বর্তমানে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা।
আজ বুধবার (৮ মার্চ) আরএমপি সদর দপ্তরে দুপুর ১২ টায় এক সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) বিজয় বসাক, বিপিএম, পিপিএম (বার)এই তথ্য জানান।
ঘটনাসূত্রে জানা যায়, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া News24 TV -এ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, সারাদেশব্যাপী আসন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়া এবং বিভিন্ন চাকরির প্রলোভন দিয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীদের নিকট হতে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া একটি চক্রের সদস্যরা নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন নিউমার্কেট সংলগ্ন পিজি টাওয়ার বিল্ডিং-এর ১০ম তলায় অবস্থান করছে। এখান থেকেই নগরীর বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মালিকদের সহযোগিতায় তারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তিচ্ছু ও চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর তাদের নিকট হতে পরীক্ষার প্রবেশপত্রের কপি ও চুক্তি মোতাবেক অর্থের জিম্মা হিসাবে তাদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মূল সনদপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহ-সহ বিকাশ, রকেট এবং নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রাথমিক খরচ নগদ টাকা সংগ্রহ করে।
বিষয়টি আরএমপি’র পুলিশ কমিশনার মো: আনিসুর রহমান, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)-এর নজরে আসলে তিনি রাজশাহী মহানগর গোয়ন্দা পুলিশ (ডিবি)-কে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ প্রদান করেন। এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো: আল মামুনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে জালিয়াত চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো: আব্দুল্লাহ আল মাসুদের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক জনাব মো: মশিয়ার রহমান, এসআই মো: আশরাফুল ইসলাম এবং তার টিম অভিযান শুরু করেন।
পরবর্তীতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ঐ টিম গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ বিকেলে নগরীর পিজি টাওয়ারের ১০ম তলায় অভিযান পরিচালনার জন্য গেলে গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা কৌশলে পালিয়ে যায়। ফ্ল্যাটের মালিকের মাধ্যমে জানা যায় ভাড়াটিয়ার নাম মো: নয়ন ইসলাম। সে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে সেখানে তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে বসবাস করতো। বাড়ির মালিক আরও জানায়, নিজেকে কখনও ডাক্তার, কখনও সরকারি কর্মকর্তা বা এনজিও কর্মী পরিচয় দিয়ে নয়ন বিভিন্ন চাকরি প্রার্থী এবং ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করে। অনেকে এখানে আশা যাওয়া করে।
এরপর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) বিজয় বসাকের নির্দেশে প্রতারক চক্রের মূল হোতাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে গোয়েন্দা পুলিশ। আসামি নয়ন-সহ অন্যান্য সদস্যরা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দেশের সব বিমানবন্দর এবং স্থলবন্দরসমূহে বিশেষ পত্র প্রেরণ করেন। কিন্তু এর পূর্বেই আসামি নয়ন ভারতে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে গত ৬ মার্চ বিকেলে আসামি মো: নয়ন ইসলাম যশোর জেলার বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বেনাপোল ইমিগেশন পুলিশ তাকে আটক করে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করেন। বিষয়টি তারা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস), আরএমপি, রাজশাহীকে জানান।
গত ৭ মার্চ, বিকেলে পুলিশ কমিশনার মহোদয়য়ের নির্দেশক্রমে গোয়েন্দা পুলিশের টিম আসামি নয়নকে যশোর জেলার বেনাপোল পোর্ট থানায় উপস্থিত হয়ে হেফাজতে নেয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামি জানায়, সে এবং তার সহযোগী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলর বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র সনেট (পলাতক আসামি) ও আরো অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন সহযোগী পরস্পর যোগসাজসে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করে চাকরিপ্রার্থী ও মেডিকেল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু বিভিন্ন প্রার্থীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনের বিভিন্ন এ্যাপস (হোয়াটস অ্যাপস, ভাইবার, টেলিগ্রাম)-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে মোবাইল ফিন্যান্স (বিকাশ, রকেট, নগদ) অ্যাকাউন্ট কিংবা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা ডিজিটাল প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়।
অভিযান অব্যাহত আছে পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে। বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পেনাল কোডে গ্রেফতারকৃত আসামি-সহ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে।
সম্পাদনায়ঃ হাবিবা সুলতানা