সর্বশেষ

42.5 C
Rajshahi
মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

সরকার দলীয় এমপির ডিওতে ট্রেনের যাত্রী পৌর মেয়র

টপ নিউজ ডেস্কঃ সরকার দলীয় এমপির ভুয়া চাহিদাপত্রের (ডিও) মাধ্যমে রাজশাহী-ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী ‘ধূমকেতু’ আন্ত:নগর এক্সপ্রেস  ট্রেনের একটি ডাবল কেবিনের টিকিট নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ পেয়ে সোমবার রাত ১১টায় পশ্চিমের জিএম অসীম কুমার তালুকদার  রাজশাহী – ঢাকাগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ার আগে ট্রেনের নির্দিষ্ট কেবিনে গিয়ে সংশ্লিষ্ট যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক বলেন, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন সাহেব সপরিবারে ঢাকায় যাবেন বলে একটি ডিও দেন। ফলে তাকে ধূমকেতুর একটি ডাবল কেবিন দেওয়া হয়। কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে, এমপি আয়েন উদ্দিন সাহেব যাচ্ছেন না। তার জন্য বরাদ্দকৃত কেবিনে যাচ্ছেন অন্য যাত্রী। বিষয়টি এক ধরনের জালিয়াতি। এ ঘটনার সঙ্গে রেলের কেউ জড়িত কিনা তা  তিনি  নিজে খতিয়ে দেখছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক ।

এদিকে ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২১ আগস্ট রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের সংসদের প্যাডে একটি চাহিদাপত্র (ডিও) আসে রেলওয়ে টিকিট বুকিং শাখায়। তাতে বলা হয় আগামী ২২ আগস্ট রাতে আমি ও আমার পরিবারসহ রাজশাহী থেকে ঢাকায় যাব। বিধায় আমাকে একটি ডাবল কেবিন প্রদানের জন্য জোর সুপারিশ করছি।

এমপির সিল ও স্বাক্ষর করা ডিও লেটারটি রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আব্দুল মোমিনের কাছে জমা দেন রেলওয়ের ওপেন লাইন শাখা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার আলী। ফলে প্রধান বুকিং সহকারী ২১ আগস্ট এমপি আয়েন উদ্দিনের নামে ট্রেনের ‘ক’ বগির ৭ থেকে ১০ নম্বর আসন সম্বলিত একটি ডাবল কেবিনটি নিশ্চিত ও বরাদ্দ করেন।

টিকিটটি কেটে সাত নম্বর কাউন্টারে রেখে দেওয়া হয়। ২২ আগস্ট শ্রমিক লীগ নেতা আকতার আলী ফোন দিয়ে ৭ নম্বর কাউন্টারের বুকিং সহকারী আব্দুর রশিদকে জানান, মিজানুর রহমান নামে এমপির একজন লোক আসবেন। তাকে যেন টিকিটটি হস্তান্তর করা হয়। মিজানুর রহমান ২২ আগস্ট বিকালে রাজশাহী স্টেশনে গেলে তাকে টিকিটটি দেওয়া হয়। তবে টিকিটটি কাটার সময় শ্রমিক লীগ নেতার নামের বিপরীতে বকেয়া রাখা হয়।

এদিকে এমপির ডিওটি দেখে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আব্দুল মোমিনের সন্দেহ হয়। তিনি এমপিকে ফোন করে কেবিনের জন্য কোনো ডিও দিয়েছেন কিনা জানতে চান। উত্তরে এমপি আয়েন উদ্দিন তাকে জানান, আমি গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে এসেছি। আমি ঢাকা যাচ্ছি না। আর আমি টিকিটের জন্য কোনো ডিও লেটারও ইস্যু করিনি। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত পশ্চিম রেলওয়ের  জিএমের কানে যায়। ফলে জিএম সোমবার রাতে নিজেই ট্রেনের সংশ্লিষ্ট কেবিনে হাজির হন বিষয়টি জানার জন্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমপির নামে টিকিট ইস্যু হলেও রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ধূমকেতু আন্ত:নগর এক্সপ্রেস ট্রেনের নির্দিষ্ট কেবিনে যাত্রী ছিলেন মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহীদুজ্জামান ও তার তিন সহযোগী। পশ্চিমের জিএম তাদের কাছে জানতে চান তারা টিকিট কিভাবে পেয়েছেন।

জবাবে মেয়র শহীদ জিএমকে জানান, এমপির ডিওতে পেয়েছেন। জিএম এ সময় বলেন, ডিওতে পরিবারসহ এমপি সাহেবের নিজেরই তো ঢাকা যাওয়ার কথা। আমরা সে কারণেই তাকে ডাবল কেবিন ইস্যু করেছি। অন্য কেউ হলে তাকে ডাবল কেবিন দেওয়ার কথা নয়। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

অন্যদিকে পশ্চিম রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনো ভিআইপি পারসন টিকিটের জন্য ডিও লেটার ইস্যু করলে সরাসরি জিএম বরাবর দেন। জিএম পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেটা স্টেশন ম্যানেজারের কাছে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু এমপি আয়েন উদ্দিনের ডিওটি শ্রমিক লীগ নেতার মাধ্যমে প্রধান বুকিং সহকারীর কাছে যায়। এর ফলে প্রধান বুকিং সহকারীর সন্দেহ জাগে এমপির ডিওটি আসল কিনা? পরে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হন এমপি আলোচিত ডিওটি ইস্যু করেননি যদিও ডিও লেটারে এমপির সিল ও স্বাক্ষর দেওয়া আছে। তবে সেই স্বাক্ষর এমপি নিজে করেননি বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়েছেন।

বিষয়টি জানার জন্য শ্রমিক লীগ নেতা আখতার আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে সোমবার রাতে রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন  সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, তিনি কোনো ডিও ইস্যু করেননি। কারণ তার এই মুহূর্তে ঢাকায় যাওয়ার কোনো কর্মসূচি নেই। কে কীভাবে তার ডিও দিয়েছেন তিনিও খোঁজ নিচ্ছেন। তিনি রেলওয়ের জিএমকে বলেছেন বিষয়টি তদন্ত করে যেন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।

সম্পাদনায়ঃ শাহাদাত হোসাইন

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles