সাবুদানার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সবারই কমবেশি ধারণা আছে।আমরা জানি সাবুদানা শিশুদেরকেই বেশি খাওয়ানো হয়। এতে রয়েছে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান যা শিশুর শারীরিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও ফালুদাসহ বিভিন্ন ডেজার্ট খাবারে সাবুদানা ব্যবহার করা হয়।
জানেন কি, সাবুদানা শুধু শিশুর জন্যই নয় বরং নারীদের জন্যও অনেক উপকারী খাদ্য। বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান, তাদের মধ্যে অনেকেই ইন্টারমিটিং ফাস্টিং করেন। তারা কিন্তু উপোস ভাঙার সময় সাবুদানা খেতে পারেন।
সাবুদানা কে সুপারফুডও বলা হয়। এই খাবারটি স্বাস্থ্য ও সুস্বাদুতার এক সংমিশ্রণ। একজন সেলিব্রিটি পুষ্টিবিদ রুজুতা দিওয়েকর সম্প্রতি তার ইনস্টাগ্রামে সাবুদানার খিচুড়ির ছবি শেয়ার করেছেন। তিনি এই খাবারের অনেক উপকারিতা সম্পর্কে ব্যাখ্যাও করেছেন।
তার এই খিচুরির পোস্ট অনুসারে, চিনাবাদাম, কারি পাতা, জিরা, নারকেল ও ঘিসহ সাবুদানা বিশ্বজুড়ে অনেক পুষ্টিবিদদের মন জয় করছে। তিনি বলেন এটি আপনার স্বাস্থ্য ও হরমোন উন্নত করতেও ব্যবহার করতে পারেন। এর উপকারিতার পাশাপাশি একজন মানুষ দৈনিক কতটুকু সাবুদানা খেতে পারবেন সে বিষয়েও জানিয়েছেন এই পুষ্টিবিদ।
অনেকেই জনেন না যে পাম গাছের গোড়ার যে অংশ খাওয়া যায়, তার থেকেই তৈরি হয় সাবুদানা। ট্রপিক্যাল দেশে যারা থাকেন, তাদের স্টেপল ফুডের মধ্যে অন্তর্গত এ সাবুদানা। তাহলে রুজুতা দিওয়েকরের কাছ থেকে জেনে নিন সাবুর উপকারিতা–
>> ১০০ গ্রাম সাবু দানায় থাকে ক্যালোরি ৩৩২ গ্রাম, প্রোটিন ও ফ্যাট ১ গ্রাম এর কম, কার্বোহাইড্রেট ৮৩ গ্রাম, ফাইবার ১ গ্রামের কম, আরডিআই এর ১১ শতাংশ জিংক। সাবুদানা খাবারটি কার্বোহাইড্রেট এ পরিপূর্ণ বলে প্রি ওয়ার্কআউইট মিল হিসেবে খাওয়া যায়।অতি দ্রুত অ্যানার্জি বুস্ট করে এই খাবার।
>> সাবুদানার খিচুড়ি ফ্লু ও জ্বর দ্রুত আরোগ্য দেয়। আর ক্ষুধা কমাতেও সাহায্য করে। ওষুধের কোর্স শেষ হয়ে গেলে কিন্তু এক বাটি সাবু খাওয়া যেতে পারে।
>> মাসিক হওয়ার আগে অনেকের ক্ষুধামন্দা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে দুপুরের খাবারের সময়টায় টকদইয়ের সঙ্গে একটি ছোট বাটিতে সাবুদানা খেলে শক্তি পাবেন শরীরে।
>> একটি ছোট বাটি সাবুদানা মাখা বা খিচুড়ি খেলে প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে যখন একজন নারী গর্ভবতী অবস্থায় থাকেন তখন সপ্তাহে অন্তত দুইবার সাবুদানা খেতে পারেন।
>> আবার মেনোপজ ও অ্যান্ডোমেট্রিওসিসের ক্ষেত্রেও, সপ্তাহে একবার বা মাসিক চক্রের চতুর্থ দিনে আপনি একটি ছোট বাটি সাবুদানা খান। সুস্থ থাকবেন।
>> সাবুদানা হজম ও স্বাস্থ্য উন্নত করতেও সাহায্য করে। পাকস্থলীতে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায় এ সাবুদানা। এটি কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও প্রতিরোধ করে।
>> এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। যা হাড়কে শক্তিশালী করে ও হাড়ের ঘনত্ব উন্নত করতে সাহায়তা করে। নিয়মিত সাবুদানা খেলে কিন্তু অস্টিওপোরোসিস ও আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি কমে যায়।
>> উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় এখন বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত। পটাসিয়াম সমৃদ্ধ এ সাবুদানা স্বাস্থ্যকর রক্ত প্রবাহকে উন্নীত করতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি আপনার হার্টের উপর চাপ কমায়, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
>> ইঁদুরের ওপর করা একটি ল্যাব টেস্টে জানা গেছে সাবুদানা কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অনেক সাহায্য করে। এটি ঘটে কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইলোজ ।
যেহেতু সাবুদানা কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ এবং এতে অন্যান্য পুষ্টিগুণ তুলনামূলকভাবে কম তাই খাবারটিকে আরও পুষ্টিকর করতে এতে আপনি চিনাবাদাম বা অন্যান্য সবজি যুক্ত করতে পারেন। বিশেষ করে সাবুদানার খিচুড়ি সাস্থ্যের জন্য বেশ স্বাস্থ্যকর।
তবে অবশ্যেই মনে রাখবেন, বেশি পরিমাণে সাবুদানা কিন্তু একেবারেই খাওয়া যাবে না যদি আপনি ওজন কমাতে চান অথবা ডায়াবেটিসের রোগী হন। সাবুদানা স্টার্চযুক্ত ও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি । যা আপনার ওজন বাড়াতে পারে।
সূত্র: ডিএনএ ইন্ডিয়া/টাইমস অব ইন্ডিয়া