সর্বশেষ

31.5 C
Rajshahi
বুধবার, মে ১, ২০২৪

কেমন ছিলো একাত্তরের সাতক্ষীরা

স্বাধীনতার মাসের বিশেষ প্রতিবেদন

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: অগ্নিঝরা মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। পাক হানাদার ধ্বংস করতে চেয়েছিল বাঙ্গালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে, আঘাত করেছিল মা-বোনের সম্মানেও। শত্রুর সব আঘাত সহ্য করেও সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা অন্তত ২৫টি যুদ্ধের মোকাবেলা করেছিল।

১৯৭১ সালের ২ মার্চ সাতক্ষীরা শহরে পাকিস্তান বিরোধী মিছিলে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে শহীদ আব্দুর রাজ্জাককে। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে পর সাতক্ষীরার দামাল ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া। সাতক্ষীরা ট্রেজারী হতে অস্ত্র আর ন্যাশনাল ব্যাংক হতে টাকা-পয়সা ও অলংকার লুটের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুক্তির সংগ্রাম। ২৭ মে সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয় । এ যুদ্ধে দুইশতাধিক পাক সৈন্য নিহত হয়। ১৭ ঘণ্টাব্যাপী চলমান এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শহীদ হয়েছিলেন তিন জন  এবং আহত হন আরো দুজন। এরপর থেমে থেমে চলতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত হামলা। এসব যুদ্ধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভোমরার যুদ্ধ, বৈকারী যুদ্ধ, টাউন শ্রীপুর যুদ্ধ, বালিয়াডাঙাযুদ্ধ,  খানজিয়া যুদ্ধ। প্রায় ৩৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা এসব যুদ্ধে শহীদ হয় । এরপর ৩০ নভেম্বর টাইম বোমা দিয়ে শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত পাওয়ার হাউস উড়িয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা, রাতের আঁধারে বেড়ে যায় গুপ্ত হামলা। পিছু হটতে থাকে পাক সেনারা। এরপর ৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় টিকতে না পেরে কদমতলা, বেনেরপোতা ও বাঁকাল ব্রীজ উড়িয়ে দিয়ে পাক বাহিনী সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় সাতক্ষীরা।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শত্রুদের গুলিতে সাতক্ষীরার শহীদ বীর সন্তানরা হলেন – তারা হলেন শহীদ আব্দুর রাজ্জাক, খোকন, কাজল, নাজমুল, নুর মোহাম্মদ, হাফিজউদ্দিন, ইমদাদুল হক, আবু বকর, জাকারিয়া,  আব্দুর রহমান, শাহাদাত হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, আমিনউদ্দিন গাজী, সুশীল কুমার, আব্দুল ওহাব, লোকমান হোসেন, দাউদ আলী, সামছুদ্দোহা খান, রুহুল আমীন, জবেদ আলী, মুনসুর আলী, শেখ হারুন অর রশিদ প্রমুখ।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে, ঝাউডাঙা বাজারের পুজা মুপের পাশে, দীনেশ কর্মকারের  ডোবায়, বাদামতলা, বাঁকাল ব্রীজের নীচে, তালা উপজেলার পারকুমিরা,  জালালপুরের বেলে,শ্যামনগরের গোপালপুর, মাগুরা, কালীগঞ্জের পূর্ব নারায়ণপুর,  কলারোয়ার বালিয়াডাঙা, দেবহাটার খেজুরবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে পাকসেনারা গুলি করে হত্যা করে অগণিত নারী , পুরুষ ও শিশুকে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সংরক্ষিত হয়নি এসব স্থানের গণকবর ও বধ্যভূমির অধিকাংশই।

এ বিষয়ে উল্লেখ্য সাতক্ষীরার অন্যতম বীর মুক্তিযোদ্ধা খান আসাদুর রহমান(৭৬), মাত্র ২৪ বছর বয়সে দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করার জন্য উদ্বুদ্ধ হন। তিনি ৯ নং সেক্টরের আওতাধীনে মুজিব বাহিনীর হয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে, যুদ্ধে অন্যতম নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর মেজভাই প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান ও ছোটভাই অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা মাহামুদুর রহমান খান। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তিনি ১৯৭২ সালে বড়সিমলা কারাবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন। অতঃপর ২০০৪ সালে তিনি অবসরে যান। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার জন্য তিনি এখন পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন।

সম্পাদনায়ঃ হাবিবা সুলতানা

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles