টপ নিউজ ডেস্ক : আজ ১৮ সেপ্টেম্বর, কৃষ্ণপুর গণহত্যা বা কৃষ্ণপুর হত্যাকাণ্ড দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে, বাংলাদেশের সিলেট জেলার কৃষ্ণপুরে পাকিস্তানি দখলদারি সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে ১২৭ জন বাঙ্গালী হিন্দুদের হত্যা করে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে হত্যা করে একশোরও অধিক হিন্দুকে।
সিলেট জেলার বলভদ্রা নদীর পাশে একটি প্রত্যন্ত গ্রাম ছিল কৃষ্ণপুর। বর্তমানে গ্রামটি হবিগঞ্জ জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে একদম শেষমাথায় লাখাই উপজেলায় পড়েছে। কৃষ্ণপুর এবং পার্শ্ববর্তী চণ্ডীপুর গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত ছিল।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ছয়মাস সাধারণভাবেই জীবনযাপন করেছিল কৃষ্ণপুর গ্রামের লোকেরা। গ্রামটি প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়াতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের শিকার হওয়ার আশংকায় অনেক হিন্দু শরণার্থী হিসেবে কৃষ্ণপুর গ্রামে আশ্রয় নেয়। অন্যদিকে পাকিস্তানি দখলদারি সেনাবাহিনী হবিগঞ্জের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং তারা লাখাই পর্যন্ত এসে পৌঁছে যায় কিন্তু কৃষ্ণপুরের দিকে অগ্রসর হয়নি।
১৯৭১ সালের আগস্টে হবিগঞ্জ জেলার (বর্তমান) হিন্দুদের উপর গণহত্যাসহ কতিপয় যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত হয় পাকিস্তানি দখলদারি সেনাবাহিনী। সেপ্টেম্বর মাসে নৃশংসতা কিছুটা হ্রাস পায়। কিন্তু ১৬ সেপ্টেম্বর তারিখে একদল লোক কৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে লাখাই গিয়েছিল, তাদের অষ্টগ্রাম থেকে নৌকা দিয়ে ধরা হয়। সে রাতেই রাজাকাররা দেশীয় নৌকা নিয়ে গ্রামটিতে এসে পোঁছে এবং সারা গ্রাম বেষ্টন করে ফেলে।
১৮ই সেপ্টেম্বর খুব ভোরে, কৃষ্ণপুর গ্রামে আসে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ক্যাম্প হতে পাকিস্তানি সৈন্যের একটি দল। দুটি স্পীডবোটে করে পাকহানাদাররা দুটি দলে আসে। একটি দল নৌকা থেকে নেমে গ্রামে ঢুকে নির্বিচারে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। অন্য দলটি পাহারা দিতে থাকে তখন গ্রাম এবং নৌকা। ঐসময়ে রাজাকাররাও গ্রামে ঢুকে গুলি চালাতে থাকে এবং লুটপাট করে। তারা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে বন্দুক দেখিয়ে গ্রামবাসীদের নগদ টাকাপয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে। এরপর পাকিস্তানি সৈন্যরা সারা গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়।
অতঃপর ১৩০ জন ব্যক্তিকে তারা কমলাময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে চক্রাকারে দাঁড় করায়। একটি সারিতে লোকগুলোকে দাঁড় করিয়ে বার্স্ট ফায়ার করে হত্যা করা হয়। বুলেটের আঘাতে জর্জরিত হয়েও বেঁচে যায় প্রমোদ রায়, নবদ্বীপ রায় এবং হরিদাস রায় কিন্তু সারা জীবনের জন্য তারা বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে।
চণ্ডীপুরে মাত্র ১৬ টি পরিবারের বাস করতো। সকল গ্রামবাসিকে একই লাইনে দাঁড় করিয়ে বার্স্ট ফায়ার করা হয়। এতে মারা যায় ৪৫জন হিন্দু। মাত্র দুজন এই গণহত্যায় ব্যক্তি বেঁচে যায়। এদিন ৪০জন হিন্দুকে লালচাঁদপুর এলাকায় মধু নমঃশূদ্রের বাড়িতে বেষ্টন করে রাখা হয়। সবকিছু লুটপাটের পর, তাদেরকেও একই লাইনে দাঁড় করিয়ে বার্স্ট ফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। একই কায়দায় গোকুলনগরেও হিন্দুদের হত্যা করা হয়।
সম্পাদনায়ঃ হাবিবা সুলতানা