টপ নিউজ ডেস্কঃ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে ফোন করে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তিচুক্তির জন্য কিছু দাবির কথা বলেন।
এই ফোনালাপের আধা ঘণ্টার মধ্যে বিবিসির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জন সিম্পসন এরদোয়ানের প্রধান উপদেষ্টা ইব্রাহিম কালিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। সিম্পসনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ইব্রাহিম কালিন বলেন, রাশিয়ার দাবিগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগে চারটি দাবি করেছে যা ইউক্রেনের জন্য পূরণ করা কঠিন নয়। দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে এবং ন্যাটোতে ইউক্রেন যোগ দিতে পারবে না। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এর মধ্যেই ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন।
ইব্রাহিম কালিন মনে করেন, প্রথম ভাগের অন্য তিনটি দাবি রাশিয়ার মর্যাদা রক্ষার জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। দাবিগুলো হচ্ছে ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে এবং তাদের নিশ্চিত করতে হবে যে রাশিয়ার জন্য তারা হুমকি নয়। এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার ভাষা সংরক্ষিত করতে হবে। আর নাৎসিবাদ পরিত্যাগ করতে হবে।
নাৎসিবাদ পরিত্যাগ করার বিষয়টি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির জন্য খুবই অশোভনীয়। কারণ, জেলেনস্কি নিজে ইহুদি এবং তাঁর বেশ কয়েকজন স্বজন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর হাতে নিহত হয়। তুরস্ক মনে করছে, এই দাবি মেনে নেওয়া জেলেনস্কির জন্য যথেষ্ট সহজ। ইউক্রেন সব ধরনের নাৎসিবাদের নিন্দা জানাতে এবং তা প্রতিরোধের প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে।
ইব্রাহিম কালিন বলেন দ্বিতীয় ভাগের দাবিগুলো পূরণ করা ইউক্রেনের জন্য কঠিন হবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, শান্তিচুক্তির আগে তাঁর এবং জেলেনস্কির মুখোমুখি আলোচনায় বসা প্রয়োজন। যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সঙ্গে পুতিন কী আলোচনা করতে চান, তা নির্দিষ্ট করে বলেননি কালিন।
জন সিম্পসন অনুমান করছেন, ইউক্রেনের ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত বলে ইউক্রেনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে হবে এমন দাবি তুলতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। তবে এই দাবি মেনে নেওয়া ইউক্রেনের পক্ষে খুবই কঠিন হবে। বিবিসির দাবি, ২০১৪ সালে রাশিয়া অবৈধভাবে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়।রাশিয়ার হামলার পর থেকে ইউক্রেনে যে সহিংসতা, ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, সেই তুলনায় পুতিনের দাবি খুব বেশি কঠিন নয়।
সিম্পসন আরও একটি আশঙ্কার কথা বলছেন, যদি শান্তিচুক্তির সবকিছু নিখুঁতভাবে সম্পাদন করা না হয়, তাহলে সেগুলোর অজুহাতে পুতিন ইউক্রেনে আবার হামলা চালাতে পারেন। শান্তিচুক্তির নিখুঁতভাবে সম্পাদনের জন্য অনেকটা সময় প্রয়োজন। তবে সে সময়ের মধ্যে যুদ্ধবিরতি রক্তপাত বন্ধ করতে পারে।গত কয়েক সপ্তাহে ইউক্রেনের অনেক শহর বিধ্বস্ত হয়েছে। সেগুলো আবার বাসযোগ্য করতে ইউক্রেনের দীর্ঘ সময় লাগবে। এবং লাখ লাখ শরণার্থী পুনর্বাসন করতেও দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি ইউক্রেনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারেন, তাহলে সেটিকে নাৎসিবাদের বিরুদ্ধে বড় বিজয় হিসেবে উপস্থাপন করবেন। তবে রাশিয়ায় তাঁর অবস্থান দুর্বল হবে। রাশিয়ার মানুষ বুঝতে পারবে, যে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের ব্যাপারে অনেক বেশি প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলেছেন। রাশিয়ার বন্দী সেনাদের খবর এর মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে এবং এসব ক্ষয়ক্ষতির দায় পুতিনের ওপর এসে পড়বে।
সম্পাদনায়ঃ মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ