সর্বশেষ

37.9 C
Rajshahi
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় শ্রমিক সংকটে ধান নিয়ে দিশেহারা নওগাঁর কৃষকরা

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় বোরো চাষিরা শ্রমিক সংকটে দিশেহারা, উত্তর জনপদের শষ্যভান্ডার খ্যাত নওগাঁ জেলায় এবার বোরো চাষিরা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, আকাশে গাড় ঘনকালো মেঘের ঘনঘাটার মাঝে ধান কাটা মাড়াই নিয়ে শ্রমিক সংকটে চরম বিপাকে পড়েছে। মাঠভরা পাকা ধান পড়ে রয়েছে। শ্রমিক সংকট ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এবছর ধান ঘরে তুলতে পারছে না হাজার হাজার কৃষকরা। ফলে দুর্যোগ আতঙ্কে চরম উৎকন্ঠতার মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে কৃষকদের।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাকা ও আধাপাকা ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় পাকা ধান রয়েছে পানির নিচে। এ অবস্থায় আকাশে মেঘ দেখলেই মাঠের নুইয়ে পড়া পাকা ধান ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন কৃষকেরা। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, মাঠের ধান পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে তাঁরা ধান কাটতে পারছেন না।

নওগাঁ জেলাতে প্রায় ১২শ’ মিল রয়েছে। এর মধ্যে অটোমেটিক ৫৫টি এবং বাকিগুলো হাসকিং মিল। জেলা থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হয়। জেলার চাহিদা ৪ লাখ মেট্রিক টন চাল। বাকি চাল সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বোরো মৌসুমে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ধানের ফলন কম উৎপাদিত হচ্ছে। জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। মাঠের ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারনে কৃষকদের দ্রুত মাঠের ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

নওগাঁর সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউপির প্রতাবদহ গ্রামের বাসিন্দা ও কৃষক প্রতাব চন্দ্র বলেন, এ বছর বোরো ধানে খুব বেশি লাভ হবে না। ধানের যে দাম কমছে, আর যে শ্রমিক সংকট ও বৈরি আবহাওয়া তাতে সেচ খরচ, সার ও পরিচর্যা বাবদ প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা করে টাকা খরচ হয়েছে। তারপর ঝড়ে ক্ষেতের ধান নুইয়ে পড়ায় ১০-১২ শতাংশ ধান চিটা হয়ে গেছে। আবার শ্রমিক সংকটের কারনে শ্রমিক খরচ পড়ছে প্রতি বিঘায় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা।

নওগাঁর সরইল বিলে ধান লাগিয়েছেন গোয়ালী গ্রামের কৃষক জমির উদ্দিন বলেন,। আমার বিলত ধান প্যাকে গেছে। আকাশের যে অবস্থা। ভারি বৃষ্টি কারনে সব ধান ডুবে গেছে। দৌড়াদৌড়ি করেও শ্রমিক পাওয়া য্যাচ্ছে না। আকাশে মেঘ দেখলেই খালি আল্লা আল্লা করছি। ধান না কাটা পর্যন্ত যেন ঝড়-বৃষ্টি না হয়।

নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া, বর্ষাইল, দুবলহাটি,মহাদেবপুর,বদলগাছী উপজেলার উত্তরগ্রাম, চান্দাশ, নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর, মান্দার ভালাইনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জেলার প্রায় সব জায়গায়, এখানো হাজারো একর জমির পাকা ধান মাঠে পড়ে আছে। শ্রমিকের অভাবে এসব ঘরে তুলতে পারছেন কৃষকেরা। অনেক কৃষক পরিবারের সদস্য নিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছেন। গত তিন-চার দিন ধরে নওগাঁর সদরের হাঁপানিয়া বাজার ও দুবলহাটি বাজার, মাতাজিহাট, মহাদেপুর, বদলগাছী ও নিয়ামতপুরের ছাতড়া বাজারে গৃহস্থদের ভিড় আর স্থানীয় এবং অন্য জেলা থেকে আসা শ্রমিকদের নিয়ে টানাটানির চিত্র চোখে পড়ে।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, মাঠের ৭৫ শতাংশ ধান পেকে গেছে। আমরা কৃষকদের দ্রুত মাঠের ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকেরা ধান কাটতে পারছেন না-এমন কথা শোনা যাচ্ছে। বাইরের জেলার শ্রমিক কম আসায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। ধান কাটার ভরা মৌসুমে ঈদ উৎসবের কারণে বাইরের শ্রমিকেরা আসতে পারেননি। আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে ঝড়-বৃষ্টি না হলে কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মাঠের ধান কাটা হয়ে যাবে। বিশেষ করে অনেক জমিতে পানি জমে-আরেকটু বৃষ্টি হলেই অনেক মাঠের ধান পানিতে তলিয়ে যাবে বলে শংঙ্কায় দিন কৃষক দের। এ অবস্থায় আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখলেই শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন কৃষকরা।

সম্পাদনায়ঃ হাবিবা সুলতানা

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles