নওগাঁ প্রতিনিধি : সামনে ঈদুল আজহা। কোরবানিকে উপলক্ষ করে ভাল দামে বিক্রির আশা নওগাঁর খামারিরা এবারও পশু লালন পালন করেছেন। পাশাপাশি অনেক কৃষকও কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করেছেন। তবে গরুর গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওযায় কোরবানির হাটে গরুর ভালো দাম পাবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা।
খামারিরা বলছেন, তিন মাস আগেও গো-খাদ্যের দাম সহনীয় মাত্রায় ছিল। সম্প্রতি সেই দাম চরম হারে বেড়েছে। ক্ষতিকর ট্যাবলেট, ডেক্সামেটাসন বড়ি না দিয়ে কোরবানি উপলক্ষে পুষ্টিকর প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করছেন। প্রাকৃতিক ঘাসের পাশাপাশি দেয়া হচ্ছে প্রাকৃতিক খাবার খৈল, ভূষি, ভুট্টা গুড়া, চাউলের খুদ ও খড়। কিন্তু বাজারে এসব গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারনে বেড়ে যাবে গরুর দাম। আর সেই দামে বিক্রি করতে না পারলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের।
খামারিদের দাবি, ঈদুল আজহা পর্যন্ত সীমান্ত পথে বৈধ-অবৈধভাবে সকল প্রকার গবাদি পশুর অনুপ্রবেশ বন্ধেরও দাবি জানান খামারিরা।
আরজি নওগাঁ এলাকার খামারি সাইফুর রহমান টপ নিউজকে বলেন, এখন আর গরু পালনে লাভ নেই। গত তিন মাস আগে যে গমের ভুসি কিনেছি একহাজার টাকায়, এখন তা কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকায়। আগে যে ভুট্টার গুড়া কিনেছি ১ হাজার ২০০ টাকায় এখন তা নিতে হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকায়। ৪০ কেজির মুগের ভুসি আগে ১ হাজার ৩০০ টাকায় কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। এভাবে গোখাদ্যের দাম বাড়তে থাকলে সামনের দিনে খামার টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
খামারি দুলু মিয়া টপ নিউজকে বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরুগুলোকে মোটাতাজা করছি। তবে গরুর খাদ্যের দাম এত বেশি হওয়ার কারণে খরচ বেড়েছে। কোরবানির হাটে গরুর ভালো দাম পাবো কি না তা নিয়ে চিন্তায় আছি। এর মধ্যে যদি আবার সীমান্ত পথে বৈধ-অবৈধভাবে ভারতীয় গরু প্রবেশ করে তাহলে খামারিদের পথে বসতে হবে। তাই সরকারের কাছে দাবি সীমান্ত পথে বৈধ-অবৈধ সকল প্রকার গবাদি পশুর অনুপ্রবেশ বন্ধের।
আরেক খামারি মোকলেছুর রহমান টপ নিউজকে বলেন, সামনে কোরবানীর ঈদ, আমার মত অনেক ছোট ছোট অনেক খামারী আছে, যারা দৈনিক বাজার থেকে গো-খাদ্য এনে গরু লালন পালন করে। খাদ্যের দাম বাড়ায় তারাই বেশি বিপদে পড়েছে। ভুসি ৩৫ টাকা থাকলেও এখন তা বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। এক মাসে ভুট্টার কেজি ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ টাকা কেজি হয়েছে। সয়াবিন ৪০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫ টাকা। একজন খামারী হিসাবে আমি মনে করি, যদি এভাবে খাবারের দাম বাড়তে থাকে, তাহলে আমাদের গরু লালন পালন করা ছেড়ে দিতে হবে। যারা নতুন উদ্যোক্তা আছে, তারাও সরে আসবে। এতে ক্ষতি আমাদেরই হবে।
খামারি বেল্লাল হোসেন জানান, তিনি প্রতি বছর কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গরু লালন পালন করেন। এবার তিনি ১৫টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এসব গরু বিক্রি করতে না পারলে তার অনেক লোকসান হবে। তাছাড়া ওইসব গরু আর খামারে রাখা যাবে না। শেষ পর্যন্ত অনেক ক্ষতি করে বিক্রি করতে হবে।
খামারি রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁর খামারে বর্তমানে ৩০টি গরু রয়েছে। কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য এগুলো গরু প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে মোটাতাজা করা হচ্ছে। কিন্তু গো-খাদ্যের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে খরচের সঙ্গে মিল রেখে হাটে পশুগুলো বিক্রি করতে পারবেন কিনা এনিয়ে তিনি যথেষ্ট চিন্তায় আছেন।
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন জানান, এবার নওগাঁয় ৪ লাখ ৩৩ হাজার পশু প্রস্তত করা হয়েছে। প্রায় ৩ লাখ গবাদি পশু কোরবানির জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসেবে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাড়তি ১ লাখ ৩৩ হাজার কোরবানিযোগ্য গবাদি পশু বেশি রয়েছে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলায় বিক্রি হয়ে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, এসব পশুগুলো প্রাকৃতিক খাবারের মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। এই জন্য আমরা খামারিদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু যাতে প্রবেশ করতে না পারে এ জন্য প্রশাসন ও বিজিবির সাথে আমরা সমন্বয় করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে আমরা খামারিদেরকে দানাদার খাদ্যের পরিবর্তে বেশি পরিমাণে ঘাস, গাছের লতাপাতা ও পরিমানমত কচুরিপানা খাওয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছি। তাহলে দানাদার খাবারের ওপর চাপ কমবে বলে মনে করেন তিনি।
সম্পাদনায়ঃ হাবিবা সুলতানা