নওগাঁ প্রতিনিধি: চাকরি ছেড়ে কৃষির প্রতি ঝুঁকে পড়া নওগাঁর সোহেল রানা এবার তাঁর খামারে চাষ করেছেন ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ (ব্ল্যাক সুগার কেইন)। সেই আখ সুমিষ্ট ও ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক হওয়ায় আশপাশের চাষিরাও এ জাতের আখ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আর কৃষককে এ জাতের আখ চাষে বাণিজ্যিক ভাবে সফল করতে সকল ধরনের সহযোগীতা করছেন কৃষিবিভাগ।
নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়নের রূপগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আজিজার রহমানের ছেলে সোহেল রানা (৪০)। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ঢাকায় একটি দৈনিক পত্রিকার ফিচার বিভাগে কিছুদিন তিনি চাকরি করেন। সেই চাকরি ছেড়ে নিজ এলাকায় পৈতৃক ১২ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন সমন্বিত কৃষি খামার ‘রূপগ্রাম অ্যাগ্রো ফার্ম’। এরপর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।


পরে সাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়া এলাকায় ৭০ বিঘা জমিতে ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক’নামে তাঁর গড়ে তোলা মিশ্র ফলবাগান এলাকায় ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে। বাগানে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির ফল চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছেন তিনি।
এবার তাঁর খামারে চাষ করেছেন ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ। আখগুলোর বাইরের অংশ দেখতে কালো খয়েরি। লম্বায় সাধারণত ১২ থেকে ১৬ ফুট। দেশীয় আখের মতো হলেও এর আছে বেশ কিছু ভিন্নতা। এই আখের কাণ্ড কিছুটা নরম, রস বেশি, মিষ্টি বেশি, চাষের পর লাভ বেশি। এসব কথা ভেবেই অনেক চেষ্টার পর ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ ‘ব্ল্যাক সুগার কেইন’ চাষ করেছেন কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা।
সোহেল রানা জানান, প্রায় দুই বছর আগে ফিলিপাইনের ব্ল্যাক সুগার কেইন জাতের ৮০০ বীজ সংগ্রহ করেন জয়পুরহাট থেকে। সেই বীজ থেকে আখ চাষের পর সেখান থেকে তিনি ৫ হাজার বীজ তৈরি করেন। সব বীজ তিনি বাগানে পায়ে হাঁটা পথগুলোর দুপাশে রোপণ করেন। বীজ রোপণের পর কিছু নষ্ট হলেও এখন তাঁর বাগানে এখন শোভা পাচ্ছে ফিলিপাইনের সাড়ে তিন হাজার আখ।
বাগান দেখতে আসা উজ্জ্বল হোসেন জানান, এ জাতের আখ আমি আগে দেখিনি। এটি এখানেই এসে প্রথম দেখলাম ও খেলাম। এটি অনেক সুস্বাদু ও রসালো। এখানে এসেছি এ জাতের আখ চাষের পদ্ধতি জানতে ও বীজ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। সঠিক পরামশ্য পেলে আমিও এ আখ জাষ কবো।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু হোসেন জানান, সোহেল রানা একজন সফল উদ্যোক্তা। তাঁর বাগানে পুষ্টিকর ফল ড্রাগন, প্যাসন, পেয়ারা, বরই চাষ করে সফল হয়েছেন। এবার ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষেও তিনি সফল হয়েছেন। অন্য চাষিরাও চাইলে এই আখ চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে সফল হতে পারেন। কৃষি বিভাগ নতুন জাতের এ আখ চাষে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
সম্পাদনায়ঃ হাবিবা সুলতানা