সর্বশেষ

28.2 C
Rajshahi
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

নওগাঁয় ভিজিএফের চাল বিতরনের তালিকায় মৃত ব্যক্তিদের নাম

নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নে ভিজিএফ এর চাল বিতরনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম রুবেলের বিরুদ্ধে। উপকারভোগীদের নামের তালিকায় বিভিন্ন জীবিত ও মৃত ব্যক্তিদের ভোটার তথ্য ব্যবহার করে তাদের নামে অবৈধভাবে চাল উত্তোলন করে আত্মসাত করা হয়েছে। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপকারভোগীরা। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন সুধীজনরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গরীব, অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিংয়ের (ভিজিএফ) চাল বিতরণ করা হয়েছে। যেখানে ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ আগে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের উপকারভোগীদের তালিকা তৈরী করে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ৪ জুলাই নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর ১ হাজার ৬৯৪ জন উপকারভোগীর নামের তালিকা তৈরী করে জমা দেন চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম রুবেল। যেখানে অনেক মৃত ব্যক্তিদের জীবিত দেখিয়ে তালিকায় নাম দেয়া হয় এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত কারণে বসবাসকারী ওই ইউনিয়নের লোকেদের নাম দেয়া হয়। তালিকায় একাধিক চাকুরীজিবী, বিত্তবান ও দাদন ব্যবসায়ীর নামও দেখা যায়। এছাড়াও জীবিত যাদের নাম দেয়া হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই ভিজিএফ তালিকায় নাম থাকা বিষয়ে অবগত নন। অথচ তাদের অজান্তেই তাদের নামে চাল উত্তোলন করিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। ঈদের পর বিষয়টি জানাজানি হলে পুরো ইউনিয়ন জুড়ে ক্ষোভে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন সুধীজনরা।

চন্ডিপুর ইউনিয়নের বলিরঘাট গ্রামের বাসিন্দা জহুরা বেগম ও আবদুল মজিদ বলেন, ঈদে ভিজিএফ এর চাল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিরতরন করা হলেও তালিকায় আমাদের নাম থাকার বিষয়টি জানানো হয়নি। ঈদের কিছুদিন পর জানলাম ওই তালিকায় আমাদের নাম দিয়ে চালগুলো অন্য কেউ তুলে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের মতো হতদিরদ্রদের চালগুলো দিয়েছেন। অথচ সেই চালেও ভাগ বসাচ্ছেন চেয়ারম্যান-মেম্বাররা।

পাশ্ববর্তী ইলশাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম ও চুনিয়াগাড়ী গ্রামের বাসিন্দা এবাদুল হক ও স্বপন বলেন, ভিজিএফ এর তালিকায় আমাদের নাম থাকলেও আমরা কোন চাল পাইনি। তালিকা করা হচ্ছে সেটাও আমরা জানতাম না। গরীবের হক যারা মেরে খাচ্ছে, তাদের বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানান তারা।

চন্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা মারুফ আহম্মেদ বলেন, ভিজিএফ এর তালিকায় অসংখ্য জীবিত এবং মৃত ব্যক্তিদের নাম দিয়ে চাল উত্তোলন করেছেন চেয়ারম্যান। বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান কর্মসংস্থান কর্মসূচির টাকা থেকে শুরু করে ভিজিএফ চাল সবকিছুই আত্মাসাত করছেন। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক পদে থাকায় তিনি কাওকেই তোয়াক্কা করেন না। এসবের প্রতিবাদ করতে গেলে তার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে হামলার শিকার হতে হয়। তাই আমরা অনেক কিছু দেখেও প্রতিবাদ করতে পারি না। ভিজিএফ এর চাল অসহায় ও দুস্থদের জন্য প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। এই চাল কোথায় গেলো, সেটি ক্ষতিয়ে দেখে এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

ইউপি সদস্য আব্দুস সবুর মন্ডল ও ময়েন উদ্দিন বলেন, সামান্য কিছু কার্ড আমাদের মাধ্যমে উপকারভোগীদের বিতরন করা হয়েছে। আমরা নিজেরা যেসব কার্ড বিতরন করেছি, সেখানে কোন অনিয়ম হয়নি। বাকী কার্ডগুলো কি হয়েছে সেটা চেয়ারম্যান বলতে পারবেন।

সদর উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার ও ইউনিয়ন ট্যাগ অফিসার ওয়াহেদুল্লাহ প্রামাণিক বলেন, চাল বিতরনের দিন একই ব্যক্তি একাধিক কার্ড দিয়ে বিপুল পরিমাণ চাল উত্তোলন করেছেন। তাদের বাঁধা দিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী পরিচয় দেয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিক ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েও লাভ হয়নি। বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে জানিয়েছিলাম। চাল দিতে বিকেল হয়ে যাওয়ার কয়েক বস্তা চাল বিতরন শেষ না হতেই আমি চলে আসি।

চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম রুবেল বলেন, ভিজিএফ এর তালিকা স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা মিলে তৈরী করেছেন। ইউপি সদস্যদের মাধ্যমেই উপকারভোগীদের মাঝে টোকেন দেয়া হয়েছিল। চাল বিতরণের দিন যাতে একই ব্যক্তি একাধিকবার চাল নিতে না পারে, সেজন্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজে উপস্থিত ছিলাম। কিছু লোক টোকেন নিয়ে সময়মতো উপস্থিত না হওয়ায় অবশিষ্ট চালগুলো শেষ মুহুর্তে উপস্থিত জনসাধারনের মাঝে বিতরন করা হয়। ভিজিএফ এর তালিকা তৈরী এবং চাল বিতরনে আমার বিরুদ্ধে আনা অনিয়মের অভিযোগটি সঠিক নয়।

নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, চন্ডিপুর ইউনিয়নে ভিজিএফ এর তালিকায় মৃত ব্যক্তিদের নাম থাকাসহ চাল বিতরণে নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে দেখতে ট্যাগ অফিসারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ করা হবে।

সম্পাদনায়ঃ হাবিবা সুলতানা

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles