সর্বশেষ

26.2 C
Rajshahi
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

ভালোবাসার অপরাধে মায়ের কাছ থেকে ২৫ বছরের সাজা পেয়েছিলো যে নারী

নিজস্ব ডেস্ক, নাসরিন ইসলাম: ভালোবেসে ২৫বছর গৃহবন্দি, দেখতে পায়নি বাইরের আলো। পায়নি ঠিকমত খাবার। ২৫ বছরে শরীরে ধরে গেছে পোকা। এ যেন কোনো সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। ১৮৪৯ সালে পহেলা র্মাচ ফরাসি এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে মেয়ে। নাম তার ব্লাঞ্চ মনিয়ার। ম্যাডাম মনিয়ারের দানশীলতা এলাকায় বেশ নামডাক ছিলো মনিয়ার পরিবারের। মেয়ে ব্লাঞ্চ ছাড়াও তার ছিলো এক ছেলে, র্মাশাল মনিয়ার।

ছোটবেলায় যত না সুন্দরী ছিলো ব্লাঞ্চ, বড় হওয়ার পর সে রূপ আরো বেড়ে যায়। রূপ যেন তার ঝরে পড়ে যুবতি মুখখানায়। মেয়ের রূপে, অহংকারের শেষ নেই মায়ের।

মেয়ে এখন র্পূণ যুবতি, ২৫ বছর বয়স। মা তখন মেয়ের বিয়ে ঠিক করলো এক অভিজাত পরিবারে। কিন্তু ততদিনে যুবতি ব্লাঞ্চ মন দিয়ে বসে আছেন অন্য একজনকে। পেশায় সাদামাটা একজন উকিল সে, পরিবারও খুব সাধারন। ব্লাঞ্চ তার পছন্দের মানুষটিকে নিয়ে আসে তার মায়ের সাথে পরিচিত করতে। কিন্তু সাধারন ঘরের ছেলে হওয়ায় তার সাথে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায় মা। কিন্তু ব্লাঞ্চ এ সিদ্ধান্তে রাজি না হলে, মেয়েকে চিলেকোঠার ছোট একটি ঘরে আটকে রাখে তার মা।এই বন্দীত্ব থেকে মুক্তি পেতে একটি উপায়ই বলে দেয় মা। আর তা হলো, তার পছন্দ করা ছেলের সাথে বিয়ে করতে রাজি হওয়া।

কিন্তু মেয়েও তার মায়ের মতই জেদী, বিয়ে করলে সে তার ভালোবাসার মানুষকেই করবে। বছরের পর বছর চলে যায় কিন্তু না মেয়ের সিদ্ধান্ত বদলায়, না মায়ের মন গলে।ফলে মুক্তি পায় না ব্লাঞ্চ। ১৮৮৫ সালে ভালোবাসার মানুষটি মারা যাওয়ার পরও মুিক্ত পায়নি ব্লাঞ্চ। অন্যদিকে ব্লাঞ্চের মা ও ভাই প্রচার করে তাদের মেয়ে হারিয়ে গেছে আর সে শোকে তারা কাতর।

২৫ বছর পর ১৯০১ সালে এটর্নি জেনারেলের কাছে অজ্ঞাতনামা একটি চিঠি আসে। কে বা কারা সে চিঠি পাঠিয়েছে তা কখনও জানা যায় নি। সেখানে লেখা ছিলো, মনিয়ার পরিবার বহুবছর ধরে তাদের বাড়িতে আটকে রেখেছে এক মেয়েকে। মনিয়ার পরিবারের সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে প্রথমদিকে তদন্ত করতে না চাইলেও পরবর্তিতে তদন্ত চালাতে নির্দেশ দেন জেনারেল। বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কিছুই যখন পাওয়া গেলো না তখন, ফিরে যাওয়ার সময় এক সৈন্য একটু পঁচা গন্ধ পেল। তখন সেই গন্ধ অনুসরণ করে চিলেকোঠায় পৌঁছালে, সেখানে একটি অন্ধকার তালাবদ্ধ ঘর দেখতে পায় সে। ঘরে একটিমাত্র ছোট বন্ধ জানালা ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। এরপর একজন সৈন্য জানালার মোটা কাঁচ ভেঙ্গে দেখতে পেল ঘরের এক কোণায় শিকলবন্দী এক নারী। তাকে দেখে সেনারা দরজা ভেঙ্গে ভিতরে গিয়ে দেখতে পায় বিভৎস এক দৃশ্য।

বিছানার কোনায় শুয়ে আছেন মনিয়ার ব্লাঞ্চ আর পাশে রয়েছে পঁচা কিছু খাবার ও অসংখ্য কীট। এই ২৫ বছরে সে দেখেনি বাইরের আলো বাতাস, তার চেহারা হয়ে গেছে বিভৎস। ততক্ষণাৎ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেসময় তার ওজন ছিলো ২২ কেজি। আর গত ২৫ বছরের বন্দী জীবনের ভয়ানক স্মৃতি তাকে তাড়া করছিলো, কিছুতেই সেস্মৃতি মাথা থেকে মুছতে পারছিলেন না তিনি। গুরুতর মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তার। ব্লাঞ্চকে ভর্তি করা হয় ফ্রান্সের এক সাইক্রেটিক হাসপাতালে। ১৯১৩ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানে বাকি জীবন কাটায় সে। ভালোবাসার অপরাধে এই শস্তি পেতে হলো তাকে।

ব্লাঞ্চের মা ও ভাইয়ের কি পরিণতি হয়েছিলো জানতে চান কি?
তাহলে শুনুন ব্লাঞ্চকে উদ্ধার করার পর এরেস্ট করা হয় তার অসুস্থ মা ও ভাইকে। পরবর্তিতে জামিন পেয়ে বাসায় যায় কিন্তু ততদিনে সবাই সবকিছু জেনে গিয়েছিলো। ব্লাঞ্চ উদ্ধার হওয়ার ১৫ দিনের মাথায় বিক্ষুদ্ধ জনতা ভীড় করে তাদের বাসার সামনে। আতঙ্কিত হয়ে হার্ট অ্যাটাক করেন ব্লাঞ্চ মনিয়ার মা। সেদিনই মারা যান তিনি।

এভাবেই এক জেদী মায়ের সংসার ধ্বংস হয়ে যায়।

সম্পাদনাঃ সাদী ইউসুফ

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles