সর্বশেষ

43 C
Rajshahi
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ৩৯ মেট্রিকটন সরকারী চাউল নিয়ে অনিয়ম

রিজাউল করিম সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরায় আমন মৌসুমে সরকারি চাউল না ক্রয় করে বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায়ের বিরুদ্ধে। সরকারের অতিরিক্ত বরাদ্দের ৩৯ মেট্রিকটন চাউল ক্রয়ে নয়ছয় করেছেন তিনি। গুদামে চাউল নেই অথচ খাতাখতিয়ানে ক্রয় দেখানো হয়েছে। প্রতি কেজি চাউল ক্রয় ৪০ টাকা হিসেবে ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন এই গুদাম কর্মকর্তা। তবে অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন তিনি। উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলছেন, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাতক্ষীরা জেলা খাদ্য অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আমন মৌসুমে শ্যামনগর উপজেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯১৯ মেট্রিকটন। এর মধ্যে নকিপুর খাদ্য গুদামে নির্ধারিত হয় ৩৫০ মেট্রিকটন ধান। তার মধ্যে ধান সংগ্রহ হয়েছে ২০১ মেট্রিকটন। নকিপুর গুদামে প্রথম ধাপে চাউল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯.৮৮০ মেট্রিকটন।  পরে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয় আরও ৩৯ মেট্রিকটন। খাতাখতিয়ানে চাল মোট সংগ্রহ হয়েছে ৭৮.৮৮০ মেট্রিকটন। ২৮ মার্চ (সোমবার) শেষ হয়েছে আমন সংগ্রহ মৌসুমের সংগ্রহ মেয়াদকাল।

বিশস্ত সুত্রে জানা যায়, নকিপুর খাদ্য গুদামে অতিরিক্ত বরাদ্দের ৩৯ মেট্রিকটন চাউল না কিনেই সংশ্লিষ্ট মিলারকে বিল প্রদান করেছেন নকিপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায়। কাগজপত্রে ক্রয় দেখানো হলেও সরকারি এই চাউলের মজুদ নেই গুদামে। খাতপত্রে সংগ্রহ ও বাস্তবে গুদামে সংগ্রহ দেখলেই অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যাবে। এছাড়া এই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাদকসেবন, ১০ টাকার চাউল ওজনে কম ও নিম্মমানের চাল দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

চাল না কিনে বিল দেওয়ায় গুদাম কর্মকর্তার লাভ ব্যাখ্যা করে তথ্য প্রদানকারী ওই গুদাম অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৩৯ মেট্রিকটন চাউল । প্রতি কেজি ৪০ টাকা হিসেবে এই চাউলের মূল্য ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ৩৯ মেট্রিকটন চাল ক্রয় দেখানো মিলারকে প্রতিকেজি চাউলের জন্য দুই টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। এতে ওই মিলার চাউল না দিয়েও পেয়েছেন ৭৮ হাজার টাকা। এছাড়া গুদাম কর্মকর্তা বাকি টাকা নিজের কাছে অথবা ওই মিলারের কাছেই রেখেছেন।

চাউল না কিনে সরকারি খাতায় হিসাব মিলবে কিভাবে প্রশ্নে তিনি জানান, এই চাল আদৌ কখনো কেনা হবে না। তবে কাগজপত্রে সমন্বয় হবে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (টিআর, কাবিখা) ডিও ধারীরা সাধারণত চাউল নেন না। তারা নগদ টাকা নেন। তখন ডিও ধারীদের নিকট থেকে ডিও অর্থাৎ চাল কিনে নিবেন গুদাম কর্মকর্তা। সেখানে প্রতি কেজি চাউলের জন্য ডিও ধারীদের ১০-১৫ টাকা কম দিবেন। এতে প্রতি কেজি চাউলে গুদাম কর্মকর্তার লাভ থাকবে ১০-১৫ টাকা। সেই হিসেবে ৩৯ মেট্রিকটন চাউলে গুদাম কর্মকর্তার ব্যবসা হবে ১০ টাকা হিসেবে ৩ লাখ ৯০ হাজার। ১৫ টাকা হিসেবে ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এভাবে সরকারি হিসাব ও খাতাখতিয়ানে মিলে যাবে।

চাউল না কিনেই বিল প্রদানের বিষয়ে নকিপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় বলেন, এই অভিযোগ মোটেও সঠিক নয়। আমি চাল ক্রয় করেছি। যদি কেউ তথ্য দিয়ে থাকেন তবে সঠিক তথ্য দেননি। এছাড়া মাদকের যে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে সেটিও সঠিক নয়। এটি সংরক্ষিত এলাকা। তাছাড়া চাউল ওজনে কম ও নিম্মমানের দেওয়ার বিষয়টিও সঠিক নয়। বাইরের মানুষ অনেকে বিভিন্ন রকম অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি তার ফোনকলটি রিসিভ করেননি। 

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আক্তার হোসেন বলেন, আমি শ্যামনগর উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। চাউল না কিনেই বিল দেওয়া হয়েছে ঘটনাটি আমি জানি না। তবে অভিযোগটি পেলাম ঘটনাটি তদন্ত করা হবে।

সাতক্ষীরা জেলা খাদ্য কর্মকর্তা প্রিয় কমল চাকমা বলেন, এখনই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগটি সঠিক হলে গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পাদনাঃ সাদী ইউসুফ

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles