সর্বশেষ

36.5 C
Rajshahi
শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪

সৌদি আরবে অগ্নিকান্ডে নিহত ২ জনের বাড়ি নওগাঁয়

নিহতের পরিবারে চলছে আহাজারি

নওগাঁ প্রতিনিধি: সৌদি আরবের দাম্মামে একটি আসবাবপত্রের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত দুই জনের বাড়ি নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায়।

নিহতরা হলেন- আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ঝনঝনিয়া গ্রামের মৃত আজিজার প্রামানিকের ছেলে রমজান আলী(৩৩) ও বিষা ইউনিয়নের উদয়পুর মন্ডলপাড়া গ্রামের মৃত রহমান সরদারের ছেলে আব্দুল বারেক সরদার(৪৫)।

সংসারের স্বচ্ছলতা আনতে গত চার বছর আগে ঋন করে সৌদি পাড়ি জমান রমজান আলী। গত ৯বছর আগে তার বাবা মারা যান। তারা দুই ভাই ও বোন। ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় রমজান। সবার ছোট ভাই ইমরান। তিন কক্ষের মাটির ঘরে তারা বসবাস করতেন। ইমরান সস্প্রতি মালেশিয়াতে পাড়ি জমিয়েছে। স্বামী পরিত্যাক্তা বোন সুমি তার ছেলের নাম সাজিদ (১০) কে নিয়ে মায়ের বাড়িতে থাকেন। সংসারের সব খরচ রমজান বহন করতেন।

কিন্তু শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেলে দেশটির দাম্মাম শহরের হুফুপ সানাইয়া এলাকায় আল-মানসুরা শিল্প এলাকায় একটি ফার্নিচার কারখানায় আকস্মিক আগুন লাগে। কাঠের কারণে দ্রুত ভয়াবহ আকার ধারণ করে আগুন। এতে কারখানাটির ভেতর আটকা পড়ে রমজান আলী ও আব্দুল বারেক সরদারসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিকের হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতের বাড়িতে চলতে শোকের মাতম। নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে আকাশ বাতাস। প্রতিবেশিরা তাদের স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। রান্না ঘরে চুলার ওপর হাড়ি উঠানো আছে। রান্নার উপকরণ চুলার পাশে পড়ে আছে। তবে রান্না হয়নি। রমজান মারা যাওয়া৷ শোকে সবাই কাতর। স্বজনারা রমজানের মাকে ঘিরে বসে আছেন।

স্বজনদের দাবী দ্রুত লাশ দেশে এনে দাফন সহ ক্ষতিপুরণ দেওয়া হোক।

নিহত রমজান আলীর মা রহিমা বেগম বলেন-
গত দুই দিন আগে ভিডিও কলে ছেলের (রমজান) সঙে কথা হয়। ভিডিওকলে ইটের ভাটায় গিয়ে ইট দেখায়। ইট দিয়ে নতুন বাড়ি তৈরি করা হবে। বাড়ির কিছু কাজ মাত্র শুরু করা হয়েছে। ছেলের ব্যস্ততার কারণে আর কথা বলা হয়নি। গতকার শুক্রবারের ঘটনা হলেও আজ শনিবার সকালে ছেলে আগুনে মারা যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। কেউ আমাকে খবর জানাইনি। তবে অনেকে জানে। বেলা ১১টার দিকে খবর পাই। ছেলে বাড়ি করবে বলে অন্য কোন কাজে টাকা খরচ করেনি। নতুন বাড়িতে ছেলে থাকবে ও বিয়ে করার কথা ছিলো। কিন্তু আর হলো না। আমার সব শেষ হয়ে গেলো।

নিহত রমজানের ফুফা আব্দুস সাত্তার বলেন, তার বাবা ৯ বছর আগে মারা গেছে। এরপর তাদের সংসার অনেক কষ্ট করে চলতো। ৪বছর আগে ৫ লাখ টাকা ঋন করে সৌদি গিয়ে আসবাবপত্রে দোকানে কাজ করতো। সো পুরো সংসারের খরচ বহন করতো। এখনো অনেক টাকা ঋন হয়ে আছে। এরমধ্য এ দূর্ঘটনা। রমজান মারা যাওয়ায় সংসার এখন অচল হয়ে যাবে। সরকারে কাছে দাবী ক্ষতিপুরন দেওয়া সহ মরদেহ দ্রুত দেশে যেন নিয়ে আসা হয়।

সংসারে স্বচ্ছতা আনতে ১২বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান আব্দুল বারেক সরদার। এরআগে দুইবছর আগে স্ট্রোক করে অচল হয়ে যান বারেক সরদার। দীর্ঘ দেড়বছর চিকিৎসা শেষে পুনরায় সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের একটি সোফা কারখানায় কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু সৌদি আরবে অগ্নিকান্ডে মারা জান আব্দুল বারেকও।


নিহত বারেক সরদারের বড় ভাই শাহাদাত হোসেন বলেন, সবশেষ গত ২০২০ সালে ভাই বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর আবারো যান সৌদি আরব। তার দুই মেয়ে রয়েছে। সৌদি আরবে আমাদের এক ভাই এবং ভাতিজা রয়েছে। তারাই বারেকের মৃত্যুর ঘটনা আমাদের জানান। এই পরিবারের বারেক ছিল একমাত্র উপার্জনের ব্যক্তি। এভাবে তার চলে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছিনা। বড় মেয়েটার বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বাড়িতে এক মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, দুই জন মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছি। তবে কতজন মারা গেছে জানা নেই। বিষয়টি জানতে দুতাবাসে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

সম্পাদনায়ঃ হাবিবা সুলতানা

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles