টপ নিউজ ডেস্কঃ আজ নাগরিক কবি শামসুর রাহমানের ৯৪তম জন্মদিন। আধুনিক বাংলা কবিতার এক অনন্য নাম প্রতিভা শামসুর রাহমান। অসাধারণ উপমা, চিত্রকল্প এবং সৃজনশীলতা তাঁকে দিয়েছে কবিতার বরপুত্রের উপাধি। ছন্দময় ও শিল্পিত উচ্চারণে কবিতার চরণে চরণে তিনি বলেছেন দেশ, মাটি ও মানুষের কথা, শুনিয়েছেন স্বাধীনতার বাণী। কবির কবিতায় ছন্দে ফুটে উঠেছে অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত সমাজের কথা।
কবি ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলীতে জন্ম গ্রহন করেন এবং ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট তিনি মারা যান। তাঁর ৭৭ বছরের বর্ণময় জীবনের বড় অংশজুড়েই তিনি নিমগ্ন ছিলেন সৃজনের মোহ ও অনুরাগে। পুরোনো ঢাকায় বেড়ে ওঠায় তাঁর কবিতায় উদ্ভাসিত হয়েছে নগর জীবনের নানা অনুষঙ্গ ও প্রকরণ। তিনি জীবনানন্দ-পরবর্তী বাংলা কবিতায় এক স্বতন্ত্র স্বর।
কবি শামসুর রাহমান ষাটের দশকের শুরুর দিকে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর শুরুটা অস্তিত্ববাদী ইউরোপীয় আধুনিকতায় প্রভাবিত হলেও এক সময় দেশজ সুর ও ঐতিহ্যকে ধারণ করেন তিনি। পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক এবং সামাজিক বাস্তবতায় সমকালীন ঘটনাপ্রবাহ হয়ে ওঠে তাঁর কবিতার অন্যতম উপজীব্য। তিনি সাম্প্রদায়িকতা ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। শামসুর রাহমানের কবিতা মুক্তিযুদ্ধকালে বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে আরও বেশি উজ্জীবিত করেছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তাঁর ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ ও ‘স্বাধীনতা তুমি’।
‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। তিনি এ গ্রন্থেই প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছিলেন। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘রৌদ্র করোটিতে’, ‘নিরালোকে দিব্যরথ’, ‘আমি অনাহারী’ , ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’, ‘বন্দিশিবির থেকে’, ‘ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা’, ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’ , ‘দুঃসময়ে মুখোমুখি’ উল্লেখযোগ্য।
‘বর্ণমালা আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’, ‘গেরিলা’সহ তাঁর নানা কবিতা মানুষের মুখে মুখে ফেরে। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে জীবন বিসর্জন দেওয়া আসাদকে নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘আসাদের শার্ট’। রচনা করেছেন গণতন্ত্রের জন্য লড়াকু সৈনিক শহীদ নূর হোসেনকে উৎসর্গ করে ‘বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়’। তাঁর এ কবিতাগুলো তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
এভাবেই শামসুর রাহমান সমকালের নানা বিষয়ে গভীর সংবেদনশীলতায় সাড়া দিয়েছেন। একইভাবে তাঁর কবিতায়শৈল্পিক ব্যঞ্জনা নিয়ে প্রস্ফুটিত হয়েছে মানুষের চিরকালীন বেদনা, প্রেম, মৃত্যুসহ নানা বিষয় ।
সম্পাদনায়ঃ হাবিবা সুলতানা