সর্বশেষ

27.2 C
Rajshahi
শনিবার, মে ৪, ২০২৪

ফ্লাইওভার এর জন্য কোটি টাকার বাতি সরিয়ে ভাঙা হলো ডিভাইডার, থাকছে না প্রজাপতি লাইট

টপ নিউজ ডেস্ক: প্রকল্পের নাম সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন। রাজশাহীর উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী এর জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। অথচ রাজশাহী সিটি করপোরেশন সমন্বয়হীনভাবেই চালাচ্ছে এই কাজ। আগে থেকে কী কী বাস্তবায়ন করা হবে, সেই পরিকল্পনা করা থাকলেও অকারণে এক কাজ একাধিকবার করতে হচ্ছে। যার ফলে বিপুল অর্থের অপচয় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর।

সম্প্রতি রাজশাহী সিটি করপোরেশন ফ্লাইওভার তৈরি করতে গিয়ে সংলগ্ন সড়কগুলোতে কদিন আগেই লাগানো সড়কবাতি খুলে নিচ্ছে। কোটি টাকার এসব সড়কবাতি লাগানো হয়েছিলো ঢাকঢোল পিটিয়ে। শহরের সৌন্দর্য বলতে এসব বাতির প্রচারণায় চালানো হয়েছে। অথচ কয়েক বছরের মধ্যেই আবার নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারগুলো অংশে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বাতিগুলো খুলে ফেলা হচ্ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, রাজশাহীর মতো একটা শহরে এখনই এতোগুলো ফ্লাইওভার প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তদুপুরি রাস্তা, ডিভাইডার, বাতি আর ফ্লাইওভারের প্ল্যান একই সময়ে করা। তাহলে রাস্তা করা কিংবা বাতি লাগানোর সময় সেটা হিসাবে রাখা হলো না কেন যে, ফ্লাইওভার তৈরির সময় আবার এগুলো ভাঙ্গতে হবে?

সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর বিলসিমলা এলাকায় দুটি ফ্লাইওভারের নিরমাণ কাজের জন্য সব সড়কবাতি খুলে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে আলোচিত প্রজাপতি বাতিও রয়েছে। বিলসিমলা অংশ থেকে ডিঙ্গাডোবা মোড় পর্যন্ত সড়ক বিভাজন ভেঙে ফেলা হয়েছে। এছাড়াও কোর্ট চত্বর থেকে রায়পাড়া রেলগেট পর্যন্ত বাতি খুলে ফেলা হয়েছে। এসব সড়কে ওভারপাস নির্মাণের জন্য শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ। সড়কের মাঝে বিশাল বিশাল গর্ত করে বানানো হচ্ছে পাইল। এসব এলাকায় গাড়ি চলাচলের জন্য বিকল্প পথ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, প্রায় ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর বিলসিমলা থেকে কাশিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়ক ডিভাইডারে বসানো হয় ১৭৪টি দৃষ্টিনন্দন বাতি। খুঁটির ওপরের অংশে প্রজাপতির মতো ডানা মেলে থাকা দুই পাশে দুটি করে এলইডি বাতির কারণেই এটি রাজশাহীর ‘প্রজাপতি’ সড়ক নামে পরিচিতি পায়। প্রায় ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিটি খুঁটি বসানোর পর রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি  উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের দুই মাস না যেতেই  ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল বিকেলে হালকা ঝড়ে  ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়কের ৮৬টি খুঁটি। এর মধ্যে ৪০টি  উপড়ে যায় আর হেলে পড়ে ৪৬টি। এ ঘটনার পর রাসিক বিদ্যুৎ বিভাগের ‘হ্যারো ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানায়, দুই রাতের মধ্যে সব সড়কবাতি মেরামত করা হবে। এরপর দীর্ঘ ৭ মাস পর মেরামত করে আবারো ফিরিয়ে আনা হয় এই আলোচিত বাতি। দুটি ফ্লাইওভারের জন্য এবার ১৭৪টির মধ্যে প্রায় অরধেক বাতি পোলসহ খুলে নিয়েছে সিটি করপোরেশন।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, যদ্দূর জানি ফ্লাইওভারের পরিকল্পনা তো অনেক আগের। পরিকল্পনা আগের থাকলে এইসব সৌন্দর্যব্রধন, রাস্তার কাজ, ডিভাইডার বা বাতি ফ্লাইওভার তৈরির পরে একবারে করা যেতো। জনগণের টাকা সাশ্রয় হতো।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার টাকার অপচয় হবে না উল্লেখ করে বলেন, বাতিগুলো তো আমরা ফেলে দিচ্ছি না। এগুলো অন্য সড়কে লাগাবো। সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে ধাপে ধাপে কাজগুলো করলে সুবিধা হতো কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা তো হতোই। কিন্তু পরিকল্পনা একসাথে করা হলেও অন্যান্য ফরমালিটি তো আলাদা হয়ে যায়।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ৫টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে। এর আগে সিটি করপোরেশন একটি ও আরডিএ একটি ফ্লাইওভার তৈরি করে। এই দুটি ফ্লাইওভারেই যান চলাচলের সংখ্যা কম।

আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, এই শহর একটা অপরিকল্পিত উন্নয়নের পাল্লায় পরেছে। গাছ কেটে, পুকুর ভরাট করে একটা কনক্রিটের শহর বানানো হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, প্রকল্পের টাকাগুলো খরচ করা। অপ্রয়োজনীয় ফ্লাইওভারগুলোও একই কারণে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles