সর্বশেষ

41.3 C
Rajshahi
মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪

আজ ১৮ ডিসেম্বর নওগাঁ হানাদারমুক্ত দিবস

টপ নিউজ ডেস্ক: ৭ মার্চ ১৯৭১, জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষনের পর পরই নওগাঁয় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। আওয়ামী লীগের এডভোকেট বয়তুল্যাহকে ( এম এন এ ) আহবায়ক নির্বাচিত করা হয়। এ পরিষদের অন্যান্যের মধ্যে অন্যতম সদস্য মোঃ আব্দুল জলিল, আ ন ম মোজাহারুল হক ( ন্যাপ ভাসানী), এম এ রকীব ( ন্যাপ মোজাফফর), এ কে এম মোরশেদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। নওগাঁ ছিল ই, পি, আর ৭ নম্বর উইংয়ের হেডকোয়ার্টার। ১৮ মার্চের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন পাঞ্জাবী মেজর আকরাম বেগ। দু’জন ক্যাপ্টেনের একজন ছিলেন পাঞ্জাবী নাভেদ আফজাল, অন্যজন বাংগালী ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন। ২৫ মার্চের আগে মেজর আকরামের স্থলে বাংগালী মেজর নাজমুল হক নওগাঁয় ই পি আর এর কমান্ডিং অফিসার হিসাবে বদলী হয়ে আসেন। দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে মেজর বেগ তাকে চার্জ বুঝিয়ে দিতে অসম্মত হন। পরবর্তীতে কৌশলে ২৪ মার্চ মেজর আকরাম বেগ ও ক্যাপ্টেন নাভেদ আফজালকে গ্রেফতার করা হয়। সেই সাথে পশ্চিম পাঞ্জাবের ঝিলামের অধিবাসী নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক নিসারুল হামিদকেও গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা বন্দী অবস্থায় স্বপরিবারে নিহত হন। ফলে নওগাঁ মহকুমা সদ্য ঘোষিত স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের মুক্ত এলাকায় পরিণত হয়। এসময় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ নওগাঁর প্রশাসনিক দায়িত্বভার গ্রহন করে।

২৫ মার্চ পাক হানাদারদের আক্রমনের শিকার হলেও নওগাঁ মুক্ত ছিল প্রায় এক মাস। ২২ এপ্রিল নওগাঁ পাক হানাদারদের দখলে চলে যায়। এসময় মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত পরবর্তীতে ভারতে অবস্থান নেয়। প্রবাসী মুজিবনগর সরকার সমগ্র বাংলাদেশটিকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে। ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল নওগাঁ, নবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, হিলি, রাজশাহী, পাবনা ও নাটোর অঞ্চল। এই সেক্টরের প্রথম দিকে ক্যাপ্টেন গিয়াস, পরবর্তীতে মেজর নাজমুল হক এবং তার মৃত্যুর পর মেজর নুরুজ্জামান ছিলেন এই সেক্টরের অধিনায়ক। দেশের অভ্যন্তরে প্রেরিত মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমন পরিকল্পনা রচনা, তাদের ব্যয়ভার বহণ ও রসদপত্র সরবরাহের বিষয়ে  মোঃ আব্দুল জলিল তত্বাবধায়ক ও সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সমগ্র ১১ টি সেক্টরে ১১৪ জন ব্যক্তিকে সি এন্ড সি স্পেশাল প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষন ভারতের দেরাদুন কবুলিয়া নামক স্থানে দেওয়া হয়। ১১৪ জনের মধ্যে নওগাঁ থেকে মাত্র দু’জন কৃতি সন্তান এই দুর্লভ প্রশিক্ষন গ্রহন করেন। এরা হলেন Ñ জালাল হোসেন চৌধুরী ও আখতার আহমেদ সিদ্দিকী। এচাড়াও যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সুচনালগ্নেই নওগাঁর যেসব ছাত্র-যুবক মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাদের মধ্যে ছিলেন মোখলেসুর রহমান রাজা, আফজাল হোসেন, মুনির আহমেদ, আব্দুল মালেক, আবু রেজা বিশু, আনিসুর রহমান তরফদার, মোজাম্মেল হক, মকলেসার রহমান চৌধুরী, শামসুল হক, ওহিদুর রহমান, হাসেম আলী, ময়নুল ইসলাম ময়েন, ময়নুল হক মুকুল, খায়রুল আলম, শফিকুল ইসলাম খান, আব্দুস সাত্তার মল্লিক, হাফিজুর রহমান, আব্দুল ওহাব, আব্দুর রাজ্জাক, মোয়াজ্জেম হোসেন, হারুন-অল-রশিদ, আখতারুজ্জামান রঞ্জু, অনিমেশ চন্দ্র দাস, সিরাজুল ইসলাম আনসারী, মোরশেদ তরফদার, আলমগীর নাব সিদ্দিকী, ইব্রাহিম তারা, আবু তাহের, আব্দুস সালাম. মনিরুজ্জামান, জাহাংগীর হোসেন, খন্দকার ওয়ালিউল ইসলাম টুকু, জুলফিকারুল ইসলাম নার্গিস, আজাদ, জহুরুল ইসলাম স্বপন, এ বি এম ফারুক, গোলাম সামদানী, মকছেদ আলী, ডাঃ শাহ আব্দুল খালেক, হাবিলদার গোলাম রাব্বানী মুকুল, এস এম সিরাজুল ইসলাম, এ এফ এম নুরুজ্জামান নান্টু, আবু তালেব, খলিলুর রহমান, আবুবকর সিদ্দিক, আবুল হোসেন প্রমুখ।

১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের খবর শুনবার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল হোসেন চৌধুরী নওগাঁ আক্রমন করার সিদ্ধান্ত নেন। তার পুর্বে নদীকুল নামক স্থানে গ্রুপ কমান্ডারদারদের ব্রিফিং দেন জালাল হোসেন চৌধুরী এইমর্মে যে, নওগাঁ এখনও অবাংগালীদের নিয়ন্ত্রনে। সমগ্র নওগাঁ শহর মেজর সাঈদের ডিফেন্স পজিশনে রয়েছে। অধীনস্থ পাঞ্জাব, বেলুচ, সিন্ধি, পাঠান রেজিমেন্টকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।

১৭ ডিসেম্বর, শীতের সকাল। বিশাল মুক্তিযোদ্ধাদের দল নওগাঁ আক্রমন করে। মুক্তিবাহিনী জগৎসিংহপুর ও খলিশাকুড়ি গ্রামে অবস্থান নিলে দুই বাহিনীর মধ্যকার দুরত্ব একেবারে কমে আসে। মাঝে শুধু শাখা যমুনা নদী। এ অবস্থায় জালাল হোসেন চৌধুরী তার দলকে গুলি চালাবার নির্দেশ দেন। রাত পর্যন্ত এ যুদ্ধ স্থায়ী ছিল।

১৮ ডিসেম্বর শনিবার। সকালে বগুড়া থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় মেজর চন্দ্রশেখর , পশ্চিম দিনাজপুর বালুরঘাট থেকে নওগাঁ অভিমুখে অগ্রসরমান পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করে। হানাদার বাহিনীর তখন আর করার কিছুই ছিলনা। ফলে প্রায় দুই হাজার পাকসেনা নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে পিএম গার্লস স্কুল ও সরকারী গার্লস স্কুল থেকে শুরু করে পুরাতন থানা চত্ত্বর ও এস,ডি,ও অফিস থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে নতমস্তকে আতœসমর্পণ করে। এসময় নওগাঁর বিহারী সম্প্রদায় স্বপরিবারে কেডি সরকারী স্কুলে আশ্রয় নেয়। তৎকালিন নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানান। নওগাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাসে ‘’ জয়বাংলা’’ ধ্বনি দিতে দিতে এস ডি ও অফিস চত্ত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করে। নওগাঁ হানাদারমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর।

সম্পাদনায়: আয়েশা ইসলাম

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles