টপনিউজ ডেস্ক : মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে্ প্রায় ৯৭ শতাংশ। বড় কাজ পিচঢালাই প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ। জুনের শেষেই সেতু চালু করা সম্ভব হবে।
সেতু বা সড়কের ওপর যানবাহন চলাচলের জন্য সর্বশেষ কাজটি হচ্ছে পিচঢালাই। এখন পদ্মা সেতুতে এ পিচঢালাইয়েরিই কাজ চলছে। মূলত এটিই হলো সেতুতে সর্বশেষ বড় কাজ। এই প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা অনুসারে, এ কাজ শেষ হওয়ার কথা আছে আগামী ২৯ মে। চাইলে এরপর যেকোনো সময়ই সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারবে সরকার।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতিসংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো এবং কর্মপরিকল্পনা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেকে কখন কোন কাজ সম্পন্ন করা হবে, এর একটা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, পরামর্শক এবং প্রকল্প কর্তৃপক্ষ মিলে তৈরি এ পরিকল্পনা অনুসারে, আগামী ৩০ জুনের পর পর মূল সেতুতে আর কোনো কাজ বাকি থাকার কথা নয়।
আগামী জুন মাসের মধ্যেই পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরুর ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। গত ২৮ মার্চ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও সেতু বিভাগের এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে এবং কবে চালু হবে সে বিষয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন। এরপর ৩০ মার্চ এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সচিব জানান, আগামী ৩০ জুন পদ্মা সেতু চালু হবে।
পদ্মা সেতুর কাজগুলো মোটাদাগে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে মূল সেতু, নদীশাসন, সংযোগ সড়ক এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন। এর মধ্যেই মূল সেতু এবং নদীশাসন ছাড়া সব কাজ আগেই শেষ হয়েছে।
প্রকল্পের অগ্রগতিসংক্রান্ত সকল প্রতিবেদন অনুসারে, ৩১ মার্চ পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৯৭ শতাংশ। নদীশাসনের কাজের অগ্রগতি প্রায় ৯০ দশমিক ৫০ শতাংশ।এ সব মিলিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৯২ শতাংশ।
পিচঢালায়ের কাজ শেষ হবে ২৯ মে। মূলত সেতুতে বাতি বসানোর কাজ শেষ হবে ২৪ জুন। সব কাজ ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ঠিকাদারকেও জুনের মধ্যেই কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
২০ ধরনের কাজ চলমান
২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ স্টিলের স্প্যান জোড়া দেওয়ার পর পদ্মা সেতুতে ভারী কাজ খুব একটা বাকি ছিল না বললেই চলে । এরপর সেতুতে ছোট-বড় ২০ ধরনের কাজ বাকি ছিল। এর মধ্যে অন্যতম কাজ ছিল সেতুর প্রান্তে দেয়াল ও মাঝখানে বিভাজক বসানো এবং গ্যাসের পাইপ স্থাপন। এ সব কাজ শেষ হয়ে গেছে গত ফেব্রুয়ারি মাসেই। এরপর বাতি লাগানোর জন্য স্টিলের খুঁটি (ল্যাম্পপোস্ট) বসানো ও মেরামতকাজের জন্য মনোরেল বসানো—এ দুটি কাজও এখন শেষ হয়েছে। এখনও বাকি আছে আরও ১৪ ধরনের কাজ।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, ১৪ ধরনের কাজ আবার বড় ও ছোট—এ দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বড় কাজ বাকি আছে চারটি। বাকি ১০টি ছোট কাজ।
প্রকল্পের নথি থেকে জানা গেছে, চারটি বড় কাজের মধ্যে রয়েছে সেতুর উপরিভাগে পানিনিরোধক স্তর বসানো, মূল সেতু ও ভায়াডাক্টে পিচঢালাই এবং ৪০০ কেভি বিদ্যুতের লাইন নির্মাণ। ৭ এপ্রিল পর্যন্ত পানিনিরোধক স্তর বসানোর কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৮৯ শতাংশ। ১৮ মের মধ্যে এ কাজ শেষ করার কথা। মূল সেতু (নদীর অংশ) ও ভায়াডাক্টে (স্থলভাগ) পিচঢালাইয়ের কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত মূল সেতুতে পিচঢালাই হয়েছে ৭৪ শতাংশ এবং ভায়াডাক্টে ৫৬ শতাংশ। আগামী ২৯ মে পিচঢালাইয়ের কাজ শেষ করার কথা।
বাকি থাকা ছোট কাজগুলোর মধ্যেও কয়েকটি আবার পিচঢালাইয়ের ওপর নির্ভরশীল। যেমন সেতু এবং ভায়াডাক্টে সাইন-সংকেত ও মার্কিং বসানো এবং পানিনিষ্কাশনের পাইপ বসানো। এ ছাড়াও সেতুর প্রান্তে স্টিলের রেলিং স্থাপন, রেললাইনের পাশে হাঁটার রাস্তা নির্মাণ ও আর্কিটেকচারাল লাইটিং স্থাপনের কাজ এখনও বাকি আছে। এসব কাজের অনেকগুলোই এগিয়েছে, কিছু কাজ শুরুই হয়নি এখনও। তবে সবগুলোই ৩০ জুনের মধ্যেই শেষ করার কথা রয়েছে।
২০০৭ সালে একনেকে পাস হওয়া পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। ২০১১ সালে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় প্রায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফা সংশোধনের পর ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। বর্তমানে কয়েক দফা সময় বৃদ্ধির পর এখন ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
এ সেতু হলে মোংলা বন্দর এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলাকে সারা দেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে এ সেতু। সব মিলিয়েই পদ্মা সেতু অর্থনীতিতে যেমন প্রভাব ফেলবে, তেমনি সহজ হবে মানুষের চলাচলও।
সম্পাদনায়: নাসরিন ইসলাম