টপ নিউজ ডেস্ক: আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই আছেন যাদের এখন আর বাইরে যেতে ভালো লাগে না। নিজের ঘরে অন্ধকারে শুয়ে বসে থেকে অথবা হেডফোনে জোরে গান শুনে সময় কাটাতে ভালো লাগে।
এভাবে আপনার যে ব্রেনের ১২টা বাজাচ্ছেন এবং সেটা কী জানেন? মস্তিষ্কের ক্ষতিকারক এমন সব ১১টি অভ্যাস এবং এই ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে উঠবেন সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা রয়েছে এই নিবন্ধে।
১. অপর্যাপ্ত ঘুম
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ঘুম বলতে ২৪ ঘণ্টায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমকে বোঝানো হয়েছে । এইক্ষেত্রে, রাতে নিরবচ্ছিন্ন ঘুম সবচেয়ে বেশি দরকার। ঘুমানোর সময় মস্তিষ্ক বিশ্রাম নেয়ার পাশাপাশি, বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার করে ও নতুন কোষ তৈরি করে। কারণ ৭ ঘণ্টার কম ঘুমালে নতুন কোষ গঠন হয় না।
এর কারণে আপনি কিছু মনে রাখতে পারেন না, মনোযোগ দিতে কষ্ট হয়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, সিদ্ধান্তহীনতা । ঘুমের অভাবে ডিমেনশিয়া অ্যালঝেইমার্সের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
যদি আপনি আপনার মস্তিষ্ককে রক্ষা করতে চান তাহলে সমাধান একটা প্রতি রাতে কমপক্ষে অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুমানো। আর আট ঘণ্টা হলে বেশি ভালো।
এজন্য যেটা করতে পারেন তা হলো ঘুমের সময়ের অন্তত এক ঘণ্টা আগে বিছানায় যান, এ সময় যেনো কোনো ডিভাইস ব্যবহার না করেন। আর ঘুমের পরিবেশ তৈরি করতে আগেই শোবার ঘর পরিষ্কার করে নিন, ঘরের আলো কমিয়ে দিন, আপনার বিছানা, পোশাক, ঘরের তাপমাত্রা সবকিছু যেন আরামদায়ক হয়।
২. সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাওয়া
সারা রাত না খেয়ে থাকার পর, দিনে কাজ করা শক্তি আসে সকালের নাস্তা থেকে। আমরা অনেকেই আছি যারা , সকালে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নাস্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এড়িয়ে যাই।
যেটা হয় রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায় যার প্রভাব গিয়ে পড়ে মস্তিষ্কে।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান না করা
আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় ৭৫ ভাগ পানি। তাই মস্তিষ্কের সবচেয়ে ভালো কাজ করার জন্য মস্তিষ্ককে আর্দ্র রাখা বেশ জরুরি।
পানির অভাবে মস্তিষ্কের টিস্যু সঙ্কুচিত হয়ে যায় । এমনকি কোষগুলো কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এতে করে যৌক্তিক চিন্তা বা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
৪. অতিরিক্ত চাপ এবং শুয়ে বসে থাকা
দীর্ঘসময় খুব চাপের মধ্যে কাজ করার ফলে মস্তিষ্কের কোষ মারা যায়। এছাড়াও মস্তিষ্কের সামনে থাকা ফ্রন্টাল কর্টেক্স সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। এতে করে আমাদের স্মৃতি ও চিন্তাশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অতিরিক্ত চাপ নেয়া যেমন খারাপ তেমনি দীর্ঘ সময় শুয়ে বসে থাকাটাও একরকম ক্ষতিকর।
৫. গুগল সার্চ
খেয়াল করে দেখবেন আমাদের আগের প্রজন্মের অনেকেই ক্যালকুলেটর ছাড়াই অনেক ছোটখাটো হিসাব কষে ফেলেন। তাদের ফোন নম্বর গুলো মুখস্থ থাকে। প্রচুর বই পড়ার কারণে তাদের সাধারণ জ্ঞানও সমৃদ্ধ।
তাদের এই অভ্যাসগুলো মস্তিষ্কের ব্যায়ামের মতো যা তাদের চিন্তাশক্তি ও স্মরণশক্তিকে দীর্ঘসময় শানিত করে রেখেছে।
৬. হেডফোন ব্যবহার, উচ্চ শব্দ জোরে গান শোনা
আপনি যে হেডফোন বা এয়ারপড ব্যবহার করছেন সেটা ৩০ মিনিটেরও কম সময়ে শ্রবণশক্তির ক্ষতি করে।একইসাথে জোরে জোরে গান শুনলে অথবা উচ্চ শব্দের মধ্যে থাকলে শ্রবণের অনেক ক্ষতি হয়।
৭. একা একা থাকা, সামাজিক না হওয়া
মানুষের সাথে কথা বলা, আড্ডা দেয়া আর এক কথায় সামাজিকীকরণ আপনার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণরকম জরুরি।
তাই খুব বেশি সময় একা একা সময় কাটানো আপনার মস্তিষ্কে ঠিক ততটাই খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে যতটা পর্যাপ্ত ঘুম না হলে হয়।
সামাজিকীকরণের ফলে আমাদের মস্তিষ্ক উদ্দীপ্ত থাকলে যা সাধারণত একা থাকলে হয় না।
বরং একাকীত্ব থেকে বিষণ্নতা, উদ্বেগ ভর করে এবং এমনকি ডিমেনশিয়ার মতো রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
৮. নেতিবাচক চিন্তা ও মানুষ
আপনার যদি প্রতিনিয়ত নেতিবাচক চিন্তার অভ্যাস থাকে: যেমন আপনাকে দিয়ে কিছুই হবে না অথবা বিশ্বের অবস্থা খুব খারাপ, ভবিষ্যৎ অন্ধকার, আপনি অভাগা, এমন নেগেটিভ চিন্তাও ক্ষতিকর প্রভাব মস্তিষ্কে গিয়ে পড়ে।
কারণ নেতিবাচক চিন্তা করার ফলে একদিকে যেমন মানসিক চাপ, হতাশা এবং উদ্বিগ্নতা দেখা দেয়।
সম্পাদনায়: আয়েশা ইসলাম